ক্লিংকারের আমদানি শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়েছে বিসিএমএ

সিমেন্ট উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানিতে টনপ্রতি আমদানি শুল্ক (Customs Duty-CD) ৭০০ টাকা থেকে কমিয়ে ২০০ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন (বিসিএমএ)। এছাড়াও এসোসিয়েশন অগ্রিম আয়করের হার কমানো এবং সেটিকে চূড়ান্ত দায় হিসেবে বিবেচনা না করে সমন্বয়ের সুযোগ রাখার দাবি করেছে।

সোমবার (৩১ জুলাই) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (কাস্টমসনীতি ও আইসিটি) মোহাম্মদ মাসুদ সাদিককে দেওয়া এক চিঠিতে বিসিএমএ এসব দাবি জানিয়েছে। বিসিএমএ প্রেসিডেন্ট মোঃ আলমগীর কবিরের নেতৃত্বে সংগঠনের একটি প্রতিনিধি দল তার সাথে সাক্ষাত করে সিমেন্ট শিল্পের নানা সমস্যা ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন। এসময় তারা তার কাছে শুল্ক ও অগ্রিম কর কমানোর দাবি সংক্রান্ত এই চিঠি হস্তান্তর করেন।

বিসিএমএর চিঠিতে বলা হয়, সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা দীর্ঘদিন যাবত সিমেন্ট শিল্পের প্রধান কাঁচামাল ‘ক্লিংকার’ উপর কাষ্টমস্ ডিউটি (CD) প্রতি মেট্রিক টন ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ২০০ টাকা নির্ধারণ করার জন্য যৌক্তিকভাবে অনুরোধ করে আসছে। কিন্তু বর্তমান বাজেটে CD হ্রাস না করে, উল্টো প্রতি ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। এরফলে সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা বর্তমানে অত্যন্ত হতাশাগ্রস্ত। কোন শিল্পের প্রধান কাঁচামালের উপর কাষ্টমস্ ডিউটি (CD) সাধারণত আমদানী মূল্যের উপর প্রায় ৫% হয়। কিন্তু ‘ক্লিংকার’ এর উপর সম্প্রতি বাজেট ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি মেট্রিক টনের উপর ৭০০ টাকা কাষ্টমস ডিউটি (CD) ধার্য্য করার ফলে, কাষ্টমস্ ডিউটি (CD) দাঁড়ায় আমদানী মূল্যের প্রায় ১৪% এর বেশী।

যৌক্তিক আমদানি মূল্য ধরে শুল্কায়নঃ

বিসিএমএর চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, বর্তমানে আমদানী মূল্যের চেয়ে অত্যাধিক বেশী মূল্য ধরে শুল্কায়ন করা হচ্ছে, যা সিমেন্ট শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশের সিমেন্ট শিল্প একটি আমদানী নির্ভর শিল্প। এই শিল্পের কাঁচামাল যথা- ‘ক্লিংকার’, ‘স্লাগ’ ও ‘জিপসাম’ প্রায় শতভাগই আমদানী করতে হয়। কিন্তু এই কাঁচামালগুলো অনেকদিন যাবতই আমদানী মূল্যের চেয়ে অনেক বেশী মূল্য ধরে শুল্কায়ন করা হচ্ছে।

প্রতি টন ক্লিংকার, স্লাগ ও জিপসাম মূল্য যথাক্রমে ৪৫, ২৬ ও ৩০ ডলার ধরে শুল্কায়ন করার দাবি জানানো হয় বিসিএমএর চিঠিতে।

অগ্রিম আয়কর হ্রাস ও সমন্বয়ের সুযোগঃ

বিসিএমএর চিঠিতে বলা হয়েছে, সিমেন্ট শিল্পের বিভিন্ন কাঁচামালের আমদানি পর্যায়ে উচ্চ হারে অগ্রিম আয়কর (Advance income tax-AIT) আদায় করা হচ্ছে। এই করকে চূড়ান্ত দায় হিসেবে গণ্য করছে এনবিআর। সমন্বয়ের কোনো সুযোগ নেই।

বিসিএমএ আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম আয়করের হার কমানো ও তা সমন্বয় করার সুযোগ চেয়েছে।

বিক্রয় পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর হ্রাস ও সমন্বয়ের সুযোগঃ

বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন (বিসিএমএ) এর চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিক্রয় পর্যায়ে ২% হারে এআইটি ধার্য করা হচ্ছে। পাশাপাশি এটিকে চূরান্ত দায় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কিন্তু এটি কোনোভাবেই ০.৫০% এর বেশি হওয়া উচিত নয়। পাশাপাশি এই এআইটিকে কে সমন্বয় করার সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। তাছাড়াও, যেহেতু আমদানী পর্যায়ে কাঁচামালের উপর AIT ইতিমধ্যে দিয়ে দেওয়া হয়েছে, বিক্রয় পর্যায়ের AIT প্রদান করা, দ্বৈত কর (Double Taxation) এর সামিল।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন (বিসিএমএ) প্রেসিডেন্ট মোঃ আলমগীর কবির বলেন, বাড়তি দামে শুল্কায়ন হওয়ার কারণে ভ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে, এ আই টি এর পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই অতিরিক্ত ব্যাংক লোন বেড়ে যাচ্ছে। পণ্য মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বাজারে চাহিদা কমছে। বর্তমান সময়ে সরকারি অবকাঠামো তৈরির কাজ অর্ধেকে নেমে এসেছে, পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে এবং মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রাইভেট সেক্টরে সিমেন্টের চাহিদা কমেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় এই বৎসর অর্থাৎ ২২ ২৩ অর্থবছরে সাড়ে ৬ পার্সেন্ট ডি গ্রোথ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বৈদেশিক মুদ্রা আমাদের কাছে অতি প্রয়োজনীয় অথচ কাস্টমস কর্তৃপক্ষের ভুল নীতির কারণে অতিরিক্ত শুল্কায়ন এর সুযোগে ডলার পাচারের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।

লাইম স্টোনে শুল্কায়ন দেরি হওয়ার কারণে বৈদেশিক জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের আউটার এংকরেজ এ অতিরিক্ত সময় অপেক্ষা করতে হয় বিধায় বৈদেশিক মুদ্রায় ডেমারেজ পে করতে হয় , যা পণ্যমূল্যের উপর ইম্প্যাক্ট আসে, তাছাড়াও অযথা মহামূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার মাধ্যমে ডেমারেজ পে করতে হয়।

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.