রাশিয়ায় হঠাৎ সুদহার বৃদ্ধি

রাশিয়া মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার ১০০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়েছে। এখন সুদের হার সাড়ে ৭ থেকে বেড়ে সাড়ে ৮ শতাংশ হয়েছে। শুক্রবার (২২ জুলাই) হঠাৎই রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক (সিবিআর) এ সিদ্ধান্ত নেয় এবং সিবিআই জানায় প্রয়োজনে সুদহার আরো বাড়ানো হবে।

নিউইয়র্ক টাইমস ও রয়টার্সের খবরে থেকে জানা গেছে, ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে উচ্চ ব্যয়ের কারণে চাপে রয়েছে রাশিয়া। এর সঙ্গে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন কারণে দেশটির মুদ্রা রুবল দুর্বল হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাশিয়া এ পদক্ষেপ নিয়েছে।

গত এক বছরের বেশি সময়ের মধ্যে এই প্রথমবার দেশটিতে সুদহার বাড়ানো হলো। ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে জরুরি ভিত্তিতে সুদহার ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। এরপর কয়েক দফায় সুদের হার কমিয়ে গত সেপ্টেম্বরে তা সাড়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়।

ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর পশ্চিমা দেশগুলোর নানাবিধ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে রাশিয়া। এ কারণে দেশটিতে বিভিন্ন পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। অর্থাৎ, সেখানে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। সর্বশেষ (চলতি সপ্তাহের) মূল্যস্ফীতির তথ্যে দেখা গেছে, জুলাই মাসে রাশিয়ার নাগরিকদের পরিবারের খরচ আগের তুলনায় বেড়েছে। এ ছাড়া গত জুন মাসের শেষ দিকে পুতিনের ভাড়াটে গোষ্ঠী ভাগনারের সশস্ত্র বিদ্রোহের পর রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের ওপর চাপ বেড়েছে।

ইউক্রেনের সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধের অংশ হিসেবে এক বছরে শত শত কোটি ডলার খরচ করেছে রাশিয়া সরকার। এর একটা অংশ যাচ্ছে যুদ্ধের অস্ত্র ও উপকরণ উৎপাদনে। ইউক্রেনে রাশিয়ার যোদ্ধাদের ধরে রাখতে ও ক্ষতিপূরণ দিতে সেনাদের গড় বেতন বাড়ানো হয়েছে। আবার ইউক্রেনের অধিকৃত অঞ্চলের বাসিন্দাসহ রাশিয়ার নাগরিকদের সামাজিক সুরক্ষা খাতেও ব্যয় বেড়েছে। অনেক বেসরকারি শিল্পকারখানা বর্তমানে শ্রমিকসংকটে ভুগছে।

অন্যদিকে এই বিশাল ব্যয়ের বিপরীতে রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানি থেকে আয় অনেক কমেছে। দেশটির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়ার প্রায় ৪ হাজার কোটি (৪০ বিলিয়ন) ডলার নগদ অর্থ বিদেশে চলে গেছে। অর্থাৎ, দেশটির দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এই অর্থ অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। আবার বিদেশের অনেক ব্যাংকে রাশিয়ার সম্পদ ও অর্থ জব্দ অবস্থায় রয়েছে।

সব মিলিয়ে দুর্বল মুদ্রা, নিম্নমুখী শ্রমবাজার, বাণিজ্য ভারসাম্যে অবনতি ও বাড়তি ভোক্তা চাহিদার কারণে হিমশিম অবস্থার মধ্যে থাকা রাশিয়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ঋণ গ্রহণের খরচ তথা সুদহার বাড়িয়েছে।

সুদের হার বৃদ্ধির পর এক বিবৃতিতে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, দেশের মূল্যস্ফীতি আরও স্থিতিশীল করা তাদের উদ্দেশ্য। ২০২৪ সাল নাগাদ মূল্যস্ফীতির হার ৪–এর কাছাকাছি নামিয়ে আনতে চায় তারা। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরবর্তী সভায় সুদের হার আরও বাড়ানো হতে পারে। সিবিআরের পরবর্তী সুদহার বৃদ্ধি–সংক্রান্ত সভা আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে রাশিয়া সুদের হার বৃদ্ধি করবে—এমন অনুমান অনেকেরই ছিল। কিন্তু হঠাৎ একসঙ্গে তা ১০০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো হবে, তা অনেকেই ভাবেননি। রাশিয়ায় সুদের হার কতটা বাড়ানো হতে পারে, তা নিয়ে জরিপ করেছিল বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সেখানে অংশগ্রহণকারীরা সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। ফলে সিবিআরের গতকালের সিদ্ধান্ত তাঁদের অবাকই করেছে।

নিউইয়র্কভিত্তিক ঝুঁকি–বিশ্লেষণী সংস্থা ইউরেশিয়া গ্রুপের জিওইকোনমিকস দলের প্রধান রবার্ট কান বলেন, এটি (সুদহার ১০০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি) একটি অবাক করা পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্বেগ ফুটে উঠেছে। পাশাপাশি এটি ইঙ্গিত দেয় যে, চলমান যুদ্ধ ক্রমবর্ধমানভাবে রাশিয়ার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে এবং মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়িয়ে তুলছে।

অর্থসূচক/ এইচএআই

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.