একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার আব্দুল মান্নানসহ চারজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই ) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন। অন্য দুই সদস্য হলেন-বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।
চার আসামি হলেন- ভান্ডারিয়া উপজেলার হেতালিয়া এলাকার আব্দুল মান্নান হাওলাদার ওরফে আ.মান্নান ডিলার ওরফে মান্নাফ, একই এলাকার আশ্রাব আলী ওরফে আশরাফ আলী হাওলাদার, চরখালী এলাকার মো. মহারাজ হাওলাদার ওরফে হাতকাটা মহারাজ (জামিনে) এবং নুরুল আমিন হাওলাদার (পলাতক)।
এ তথ্য নিশ্চিত করে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সাইদুর রহমান জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায়ের সময় তিন আসামি উপস্থিত ছিলেন। বাকি একজন অনুপস্থিত থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
প্রসিকিউটর বলেন, এ মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষে ১৩ জন সাক্ষী দিয়েছেন। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম।
২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল মামলার তদন্ত শুরু করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তা বদরুল আলম এ তদন্ত শুরু করেন। এরপর ৬ নভেম্বর এ মামলার তদন্ত শেষ হয়। তদন্ত শেষে এ মামলায় ৩৩ জনকে সাক্ষী করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে অবৈধ আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, হত্যা ও গণহত্যার চারটি অভিযোগ আনা হয়।
প্রথম অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ৪ জুন পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ৩ নম্বর ধাওয়া ইউনিয়নের পূর্ব পশারিবুনিয়া গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে আসামিরা হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র মুকুন্দু বিহারি মল্লিক ওরফে ধুলাইড্যা, চিত্তরঞ্জন ব্যাপারী, সতিশ চন্দ্র ব্যাপারী, শরৎ চন্দ্র মাঝি, রসিক ঘরামী, উপেন্দ্রনাথ মিস্ত্রি ও অনন্ত চাষিকে অবৈধভাবে আটক ও অপহরণ করে গুলি চালিয়ে হত্যা করে এবং আনুমানিক ৪০ থেকে ৪৫টি বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন করে অগ্নিসংযোগে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়।
দ্বিতীয় অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমর্থক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের হিন্দু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার লক্ষ্যে চরখালী গ্রামে হামলা চালিয়ে অমূল্য রতন হাওলাদারের বাড়ি থেকে স্বর্ণ, গয়না ও মূল্যবান মালামাল লুট করে। একই সঙ্গে রতন হাওলাদারকে আটক করে ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এ ছাড়া সুরেন হাওলাদারের বাড়িতে লুটপাট ও তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে।
তৃতীয় অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের চরখালী গ্রামে মনোরঞ্জন মিস্ত্রির বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে ও তার বড় ভাই চন্দ্রকান্ত মিস্ত্রিকে অবৈধ আটক, নির্যাতন ও অপহরণপূর্বক হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করার সময় ২০০ টাকার বিনিময়ে আসামিদের কাছ থেকে মুক্তি পান।
চতুর্থ অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ২৭ অক্টোবর সশস্ত্র রাজাকারসহ পিরোজপুর সদরের সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে তৎকালীন স্থাপিত আর্মি ক্যাম্পে স্থানীয় হিন্দুদের ধ্বংস করার লক্ষ্যে হিন্দু প্রধান এলাকা ভাণ্ডারিয়া থানার শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের তিনটি গ্রামে ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সত্যরঞ্জন হালদারসহ ১৭ জনকে অবৈধভাবে আটক, অপহরণ ও গুলি করে হত্যা করে।
এর মধ্যে গুনমনি মিস্ত্রি নামে একজনকে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে হত্যা করে। আসামিদের গুলিতে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর জখম হয়। পরে দুজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
অর্থসূচক/এএইচআর
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.