দুদকের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান টিআইবির

২০১৫ সালে সংশোধিত মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ভিত্তিতে প্রণীত মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ এর তফসিলসহ জরুরি সংশোধন চেয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ অনুযায়ী, যে ২৭ ধরনের অপরাধ-সম্পৃক্ত মানি লন্ডারিং এর তদন্ত ও অনুসন্ধানের ক্ষমতা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে ন্যস্ত ছিলো, সেগুলো পুনরায় দুদকের এখতিয়ারভুক্ত করার দাবি জানিয়ে আজ  সোমবার (১৭ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে সংস্থাটি।

আজ গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “টিআইবির গবেষণা-নির্ভর ধারাবাহিক অধিপরামর্শমূলক কার্যক্রমের বহুবিধ সাফল্যের অন্যতম দৃষ্টান্ত হিসেবে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, যদিও এর কার্যকরতার ঘাটতি নিয়ে টিআইবির উদ্বেগ ক্রমাগত বেড়েই চলছে। দুদক প্রতিষ্ঠার পর থেকে  দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নিবিড়ভাবে কাজ করছে টিআইবি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে আমরা লক্ষ করেছি, যে সুনির্দিষ্ট অভীষ্ট নিয়ে দুদক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো একাধিক আইনি ও প্রশাসনিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে দুদকের ক্ষমতা হ্রাস করে তা অর্জনের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার একটি অন্যতম উদাহরণ হলো, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ অনুযায়ী দুদককে ২৭ ধরনের সম্পৃক্ত অপরাধ তদন্ত ও অনুসন্ধানের ক্ষমতা দেওয়া হলেও, ২০১৫ সালে তা সংশোধন করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯-এর তফসিলে শুধুমাত্র ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’ ব্যতিত অন্য ২৬টি অপরাধ-সংশ্লিষ্ট মানি লন্ডারিং অনুসন্ধান ও তদন্তের দায়িত্ব দুদকের কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।”

পৃথিবীর অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার দুর্নীতির অন্যতম একটি স্বরূপ উল্লেখ করে নির্বাহী পরিচালক জানান, “অর্থ পাচার প্রতিরোধে দুদকের মতো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অপরিহার্য। কিন্তু উল্লিখিত সংশোধনের ফলে অর্থপাচারের সাথে জড়িত অনেকগুলো অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্ত দুদকের এখতিয়ারভুক্ত না থাকায় সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে ঘোষিত ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুন্য সহনশীলতা’ বাস্তবায়নে, বিশেষ করে- ক্রমবর্ধমান উদ্বেগজনক সমস্যা অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে, দুদক তার প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করতে পারছে না।”

ড. জামান বলেন, “নির্ভরযোগ্য সূত্রে আমরা জেনেছি যে, দুদকের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে এ সংক্রান্ত আইনি সংশোধনের একটি উদ্যোগ চলমান আছে, যা ইতিবাচক।  এই প্রক্রিয়া অবিলম্বে চূড়ান্ত করে জরুরি ভিত্তিতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ বিশেষ করে- ২(ঠ) ধারা সংশোধন করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ এর তফসিলে বর্ণিত অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য নির্ধারিত সংস্থার তালিকা ক্রমের ৩, ৫, ৬, ১৪, ১৮, ১৯ ও ২৫ নম্বর তথা- যথাক্রমে দলিল দস্তাবেজ জালকরণ, প্রতারণা, জালিয়াতি, দেশি ও বিদেশি অর্থ পাচার, চোরাচালানী ও শুল্কসংক্রান্ত অপরাধ, করসংক্রান্ত অপরাধ এবং পুঁজি বাজারসংক্রান্ত অপরাধ (ইনসাইডার ট্রেডিং এন্ড মার্কেট ম্যানিপুলেশন) থেকে উদ্ভূত মানিলন্ডারিং বা অর্থ পাচারসংক্রান্ত সমস্ত অপরাধ অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি দুদকের এখতিয়ারভুক্ত করার লক্ষে, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ তফসিলসহ সংশোধন করতে হবে।”

টিআইবি মনে করে, আইনটির উল্লিখিত সংশোধনের সময় টিআইবির উদ্বেগ আমলে না নিয়ে শুধু দুদকের ক্ষমতা হ্রাসই করা হয়নি, বরং এর মধ্য দিয়ে মানি লন্ডারিং এর মতো গুরুত্বপূর্ণ অপরাধের সাথে জড়িতদের অবস্থান ও পরিচয়ভেদে সুরক্ষা প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। অবিলম্বে পুনরায় আইনটির বিধিমালা ও তফসিলসহ সংশোধন করে উল্লিখিত অপরাধসংশ্লিষ্ট মানি লন্ডারিং’র অপরাধকেও জরুরি ভিত্তিতে দুদকের তফসিলভুক্ত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি। একইসাথে অর্থ পাচারসহ সকল প্রকার দুর্নীতির প্রতিরোধ ও প্রতিকারে কারো প্রতি অনুকম্পা বা ভয়ের উর্ধ্বে থেকে, ব্যক্তির পরিচয় ও অবস্থান নির্বিশেষে আইনানুগভাবে সৎসাহস ও দৃঢ়তার সাথে নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধাচার নিশ্চিত করে, অর্পিত দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হওয়ার জন্য দুদকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

অর্থসূচক/ এইচএআই

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.