অভ্যন্তরীণ ৪২০০ কোটি ডলারের ঋণ পুনর্গঠন করবে শ্রীলঙ্কা

পাঁচ দিনের ব্যাংক ছুটি

শ্রীলঙ্কায় বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) থেকে পাঁচ দিনের ব্যাংক ছুটি শুরু হয়েছে। সংকটে বিধ্বস্ত দেশটিতে ৪ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের অভ্যন্তরীণ ঋণ পুনর্গঠনের জন্য ব্যাংক খাতে এই ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ঋণ পুনর্গঠনের পদক্ষেপটি এমন এক সময়ে নেওয়া হয়েছে, যখন সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সংগ্রাম করছে দেশটি।

শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক সংকটের কারণ হিসেবে ‘বেশ কিছু অন্তর্নিহিত দুর্বলতা’ এবং ‘নীতিগত ত্রুটি’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি এই বছর ২ শতাংশ সংকুচিত হবে। তবে আগামী বছরেই, অর্থাৎ ২০২৪ সালে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। অন্যদিকে আইএমএফ আগামী বছর শ্রীলঙ্কায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।

ব্রিটিশদের কাছ থেকে ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর এখনই দেশটি সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি রয়েছে। এ অবস্থায় সেই দেশের সরকার ঋণ পুনর্গঠনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়ায় তাতে আর্থিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ঋণ পুনর্গঠন করতে গিয়ে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে।

অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ অ্যালেক্স হোমস বিবিসিকে বলেছেন, ‘শ্রীলঙ্কা সরকার লম্বা ছুটি ঘোষণা করে ঋণ পুনর্গঠনের পদক্ষেপ নেওয়ার অর্থ হলো, তারা ব্যাংক পরিচালনায় এখন ঝুঁকি দেখছে।’

এই সপ্তাহের শুরুতে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে অবশ্য জনসাধারণকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে ঋণ পুনর্গঠন ‘ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে পতনের দিকে নিয়ে যাবে না।’
বিক্রমাসিংহের কার্যালয় গতকাল বুধবার জানিয়েছে যে তাঁর মন্ত্রিসভা দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি পুনর্গঠন প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। পরিকল্পনাটি সপ্তাহান্তে অনুমোদনের জন্য সংসদে জমা দেওয়া হবে।

এ নিয়ে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান নন্দলাল ওয়েরাসিংহে বলেন, ‘সরকার আশা করে যে ব্যাংক ছুটি থাকার পাঁচ দিনের মধ্যে ঋণ পুনর্গঠনের পুরো প্রক্রিয়া শেষ হবে।’ তিনি আরও বলেন, স্থানীয় আমানতকারীরা তাঁদের আমানতের সুরক্ষার বিষয়ে আশ্বস্ত থাকতে পারেন। ঋণ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় তাঁদের স্বার্থের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে তিন বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেলআউট বা আর্থিক পুনরুদ্ধার প্যাকেজ নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক ৭০০ মিলিয়ন বা ৭০ কোটি ডলারের ঋণ মঞ্জুর করেছে দেশটির জন্য। আইএমএফ এ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কাকে প্রায় ৩৩০ মিলিয়ন বা ৩৩ কোটি ডলারের তহবিল দিয়েছে। অনুমোদিত বাকি অর্থ আগামী চার বছরের মধ্যে ছাড় করবে।

বিশ্বব্যাংক বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা শ্রীলঙ্কাকে ধাপে ধাপে সহায়তা প্রদান করে যাবে। বৈশ্বিক সংস্থাটি আরও জানায়, তারা বাজেট সহায়তা হিসেবে শ্রীলঙ্কাকে ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলার দিচ্ছে। বাকি ২০০ মিলিয়ন বা ২০ কোটি ডলার দরিদ্র এবং দুর্বলদের জন্য আরও ভালো লক্ষ্যভিত্তিক আয় ও জীবিকার সুযোগ প্রদানের জন্য ব্যবহার হবে।

শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি করোনার প্রকোপ, ক্রমাগত জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, কর হ্রাসের মতো জনপ্রিয়তামুখী পদক্ষেপ এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির (৫০ শতাংশেরও বেশি) কারণে কঠিন সংকটের মুখে পড়ে।

বিশেষ করে ওষুধ, জ্বালানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঘাটতি ও মূল্যবৃদ্ধি শ্রীলঙ্কার জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয়কে রেকর্ড উচ্চতায় ঠেলে দিয়েছিল। যে কারণে দেশব্যাপী বিক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। এর জেরেই ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকার উৎখাত হয়েছিল।

অর্থসূচক/এমএইচ

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.