এশিয়াব্যাপী জলবায়ু সংকটের ক্ষতিপূরণের দাবীতে সংহতি

এশিয়া মহাদেশের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও “We Demand for Reparations” (জলবায়ু ও পরিবেশ বিষয়ক ঐতিহাসিক ক্ষতির দায় নিতে হবে) শিরোনামে শিল্পোন্নত দেশসমূহের কাছে তাদের অনিয়ন্ত্রিত শিল্পায়নের ফলে সৃষ্ট জলবায়ু সংকটের প্রভাব প্রশমনে ক্ষতিপূরণ এর দাবী জানায়। পুরো এশিয়াতে এই সমাবেশ আয়োজন করেছে এশিয়া এনার্জি নেটওয়ার্ক এবং এপিএমডিডি (এশিয়ান পিপল’স মুভমেন্ট ফর ডেট এন্ড ডেভেলপমেন্ট)।

আজ বৃহস্পতিবার (২২ জুন) সকাল ১১ টায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ইক্যুয়িটি বিডি, ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এণ্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি), ব্রতী, ক্লিন, গ্লোবাল ল’থিংকারস সোসাইটি (জিএলটিএস), বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ’র যৌথ উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়।

এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর কামাল আকন্দ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে অতিথিগণের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইক্যুয়িটি বিডি’র ডেপুটি ডিরেক্টর আহসানুল করিম বাবর, কোস্ট ফাউন্ডেশনের মনিটরিং ডিরেক্টর আমিনুল হক, সিপিআরডি’র রিসার্চ এন্ড এডভোকেসি অফিসার আল ইমরান, গ্লোবাল ল থিংকারস সোসাইটি’র প্রধান রাওমান স্মিতা, ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস’র সভাপতি এস. যেড. অপু ও অন্যান্য।

এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’র (এপিএমডিডি) সমন্বয়কারী এবং এশিয়ান এনার্জি নেটওয়ার্ক’র আহবায়ক লিডি ন্যাকপিল বলেন, গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোতে উন্নয়ন এবং জলবায়ু সংকট মোকাবেলার নামে ঋণ-সৃষ্টিকারী অর্থায়ন, লাভ-ভিত্তিক ব্যক্তিগত বিনিয়োগ এবং ত্রুটিপূর্ণ বাজার ভিত্তিক স্কিম চাইনা। আমরা কোন দয়া বা সাহায্য চাই না। আমরা গ্লোবাল নর্থের ধনী দেশগুলির কাছ থেকে আমাদের জনগণের বিশাল ঐতিহাসিক, সামাজিক, পরিবেশগত এবং জলবায়ু ঋণের জন্য ক্ষতিপূরণ এবং ন্যায়বিচার দাবি করছি।

ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, বাংলাদেশ হিমালয় থাকে নেমে আসা গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্রের দ্বারা গড়ে ওঠা এক জনবহুল জনপদ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখানে অনেক আগে থেকেই মানবিক বিপর্যয় সৃস্টি হয়েছে। ভৌগলিক অবস্থানের বাস্তবতায় এই ঐতিহাসিক ক্ষতির অবমূল্যায়ন গ্রহণযোগ্য নয়।

ইক্যুয়িটি বিডি’র ডেপুটি ডিরেক্টর আহসানুল করিম বাবর বলেন, ঋণ না নিয়ে কর ফাঁকির জায়গা গুলো বন্ধ করতে হবে, ধনী এবং মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি গুলোর ট্যাক্স যাতে ফাঁকি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

কোস্ট ফাউন্ডেশনের মনিটরিং ডিরেক্টর আমিনুল হক বলেন, জলবায়ু যদি পরিবর্তন করতে হয় তাহলে দেশীয় সম্পদে করতে হবে না হলে ধনী দেশ তা দিবে বিনা সুদে, আমরা কোন ধরনের ঋণ নিতে চাইনা।

সিপিআরডি’র রিসার্চ এন্ড এডভোকেসি অফিসার আল ইমরান বলেন, কার্বন নিঃসরণ না করে যতরকম অভিযোজনের কথাই বলা হোক সবই বিফলে যাবে। এই সকল দায় উন্নত বিশ্বকে নিতে হবে।

সমাবেশের সভাপতি হিসেবে সমাপনী বক্তব্যে কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের নামে কোন ঋণ নেওয়া যাবেনা জলবায়ু পরিবর্তন করতে হলে অনুদান দিতে হবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে। ঋণের বোঝা চাপিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে আরো ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে।

প্যারিসে চলামান নতুন বৈশ্বিক অর্থায়ন চুক্তি বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় নতুন করে ঋণ প্রদান করার যে পরিকল্পনা করছেন তা বাস্তবে গরীব দেশসমূহের জন্য গভীর ঋণের ফাঁদের ঝুঁকি বাড়াবে। এধরণের অনৈতিক ঋণ প্রথা বন্ধ ও গ্লোবাল সাউথের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের দাবীতেই আজকের এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আয়োজনকারী সংগঠন সমূহ ছাড়াও অন্যান্য পরিবেশবাদী সংগঠন এবং ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

 

অর্থসূচক/ এইচএআই

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.