ব্যাংক কোম্পানি বিল: সংসদ থেকে বিরোধীদলের ওয়াকআউট

নয় বছর থেকে বাড়িয়ে ব্যাংকের পরিচালক পদের মেয়াদ ১২ বছর করে বিল পাসের প্রতিবাদে জাতীয় সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেছেন প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্যরা। এর আগে সংসদে জাতীয় পার্টির সদস্যরা হইচই, চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকেন। এতে সাময়িক সময়ের জন্য সংসদে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।

বুধবার (২১ জুন) সংসদে ওই সংশোধনী এনে ‘ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধনী) বিল ২০২৩’ পাসের প্রতিবাদ করে ওয়াকআউট করেন তারা। অবশ্য স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে সংসদে রুলিং দেন। পরে জাতীয় পার্টির অনুপস্থিতিতে বিলটি পাস হয়।

ওয়াকআউটের আগে জাতীয় পার্টির এমপিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ব্যাংক লুটপাটের মূল হোতা পরিচালকরা। তাদের সুবিধা দেওয়ার জন্য আইন সংশোধন করা হচ্ছে। বিল সংসদে উত্থাপন ও সংসদীয় কমিটির সুপারিশে ছিল না- এমন বিধান যুক্ত হয়েছে। তার চেয়ে পরিচালকদের মেয়াদ আজীবন করে দেওয়া হোক।

গত ৮ জুন ‘ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) বিল ২০২৩’ জাতীয় সংসদে তুলেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সংশোধনীর মূল প্রস্তাবে পরিচালক পদের মেয়াদ বাড়ানো-কমানোর বিষয়ে কোনো প্রস্তাব ছিল না। পরে সেটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল। কমিটিও পরিচালক পদের মেয়াদ নিয়ে কোনো সংশোধনী আনেনি। কিন্তু সংসদে এ বিলটি পাসের আগে এ বিষয়ে সংশোধনী প্রস্তাব দেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম। তিনি পরিচালক পদের মেয়াদ টনা ১২ বছর করার প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবটি দেখে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখান জাতীয় পার্টির একাধিক সংসদ সদস্যরা। বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা প্রশ্ন তোলেন এভাবে বিলে সংশোধনী আনা যায় কি না? এ বিষয়ে তারা স্পিকারের ব্যাখ্যাও দাবি করেন।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, পরিচালক পদের মেয়াদ ১২ বছর করার জন্য সরকারি দলের একজন সদস্য সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছেন। এটা বিল উত্থাপনের সময় ছিল না। যেহেতু সরকারি দলের সংসদ সদস্য এ প্রস্তব দিয়েছেন, তাই মনে হচ্ছে এটা গ্রহণ করা হবে। তিনি প্রশ্ন রাখেন যে, বিষয়টি সংসদে উত্থাপনই হয়নি, সেটা চাওয়া হয় কী করে? ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর হাত থেকে মুক্ত করতে হবে।

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বলেন, পরিচালকরা হচ্ছেন ব্যাংক লুটপাটের মূলহোতা। কোনো পরিচালক সুপারিশ না করলে আমার মতো লোক গেলে ব্যাংক ঋণও মিলবে না। চেয়ারম্যান-পরিচালকের কারণে ন্যাশনাল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক শেষ। মনে হচ্ছে, অর্থমন্ত্রীকে কনভিন্স করে সরকারি দল করেন- এমন অনেক ব্যাংকের পরিচালকদের সুপারিশে এটা আনা হয়েছে পাস করার জন্য। সেটা হলে আমরা আমাদের সব সংশোধনী প্রত্যাহার করলাম। কারণ এর চেয়ে বড় অন্যায় আর হতে পারে না। যেখানে ব্যাংক লুটপাট করা হচ্ছে। বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক বসে বসে তামাক খায়। ব্যাংকের চেয়ারম্যান-পরিচালক হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে চলে যায়। আপনারা দেখছেন না? আপনারা আছেন কাউকে ফেবার করার জন্য। পরিচালকের মেয়াদ ১২ বছর করার এ প্রস্তাবকে আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.