‘স্বপ্ন বাস্তবায়নে এনবিআরকে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে’

আমরা ট্রিলিয়ন ডলারের স্বপ্ন দেখছি। তাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আরও বেশি সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে আয় বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

বুধবার (৭ জুন) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত বাজেট পরবর্তী এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা রয়েছে। এগুলোকে সামনে রেখেই আসন্ন বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। করোনার সময়ের সংকট কাটিয়ে ওঠার পরপরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়তে শুরু করে। এরকম সংকট আগে কখনো দেখি নাই। করোনার সময়ে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। তবে যুদ্ধ শুরুর পরে সংকট আরও বেড়েছে। সমস্যার মধ্যেই বাজেট ঘোষণা করেছে সরকার। সামনে আবার তাদের নির্বাচন। সংকট থাকলেও অনেক পজিটিভ গ্রোথ রয়েছে। রপ্তানিতে বহুমাত্রিকতা আনা উচিত ছিলো, যা আমরা করতে পারিনি।

তিনি বলেন, বাজেটে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। অনেক সময় ডলার পরিশোধ করেও বিভিন্ন কারণে আমদানি করা পণ্য পাওয়া সম্ভব হয় না। তাই নিজেদের কয়লা উত্তোলন করা উচিত। এতে খরচও কমে আসবে। এছাড়া নিজেদের কয়লা থাকলে সঠিক সময় তা পাওয়া যাবে।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। এছাড়া মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (আরএপিআইড) চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে অধিকাংশ ঘাটতি ব্যাংক খাত থেকে পূরণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে বেশি ঋণ দিলে মূল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে। বর্তমানে আমাদের বড় সমস্যা মূল্যস্ফীতি। এটির চাপ গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু থেকেই বাড়ে। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। যা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের বর্তমানে পাওয়ার ক্রাইসিস রয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আসন্ন বাজেটে উচ্চ প্রবৃদ্ধি (৭.৫%) ধরা হয়েছে। যা বাস্তবায়ন করতে গেলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক যদি সরকারকে বেশি পরিমাণে ঋণ দেয় তাহলে মূল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, এই বাজেটের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই সাধারণ মানুষকে কিছু সুবিধা দেওয়া উচিত। প্রতিবছরই বাজেটের পুরোটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। চলতি বছরেও একটা ঘাটতি থাকবে। ডলার সংকটে আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এতে আমদানি কমলেও অর্থনীতিতে চাপ বাড়ছে। আসন্ন বাজেটে প্রধান চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা, কারেন্ট একাউন্ট ব্যালেন্সের উন্নতি করা এবং ফরেন এক্সচেঞ্জ রেট স্থিতিশীল করতে হবে। এছাড়া সুদের হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। যেসব দেশ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়াটা জরুরি।

তিনি বলেন, মুদ্রাস্ফীতির সময় সরকারের উচিত ভেবে-চিন্তে খরচ করা। এসময় প্রবৃদ্ধি অর্জন করার কথা ভাবলে চলবে না। মুদ্রাস্ফীতির সময় প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা ভাবা আগুনে ঘি ঢালার মতো। বাজেট আমদেরকে পরবর্তী বছরের খরচের একটা ভিশন দেয়। আর এই মুহূর্তে বৈষম্য বেড়েছে দেশে। তাই এই মুহূর্তে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো উচিত। আর এবারের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা প্রশংসনীয়।

 

অর্থসূচক/এমএইচ/এমআর/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.