‘দ্বৈত কর ও বন্ড মার্কেটকে করমুক্তর বিষয়টি সরকারের কাছে তুলে ধরবো’

আগামী বাজেটে পুঁজিবাজার কিছুই পায়নি, এ কথাটা আসলে সঠিক নয়। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে দ্বৈত কর প্রত্যাহার, তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হারের ব্যবধানে বাড়ানো এবং সব ধরনের বন্ড মার্কেটকে সম্পূর্ণ করমুক্ত করার বিষয়গুলো সরকারের কাছে তুলে ধরবো। আপনারা যদি এই প্রস্তাবগুলো লিখিত আকারে পাঠান, তবে সরকারের কাছে আমি বিবেচনার জন্য লিখিত পাঠাবো বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

রোববার (০৪ জুন) ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) যৌথ উদ্যোগে সিএসজেএফ অডিটরিয়ামে বাজেট পরবর্তী আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, আমরা অর্থনীতির উন্নয়নের পথে রয়েছি। আমাদের দেশে এখনো পুঁজিবাজারকে হয়তো তেমনটা গুরুত্ব দেয়া হয়না। কিন্তু আস্তে আস্তে এ গুরুত্বটা বাড়বে।

এসময় বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতিও এগিয়ে যাচ্ছে। তবে কেবল ব্যাংক নির্ভরতা নিয়ে অর্থনীতি পুরোপুরি সাবলম্বী হওয়া সম্ভব না। পুঁজিবাজারই হওয়া উচিত দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। আমরা আগামী বাজেটে বেশ কিছু প্রস্তাব করেছিলাম। এরমধ্যে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কেম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট কর হারের ব্যবধান বাড়ানোর কথা বলেছিলাম। এটা করলে ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহী হবে।

তিনি বলেন, আমরা কিছুদিন আগে ১০টি কোম্পানি নিয়ে একটা সার্ভে করেছিলাম। সেখানে আমরা দেখতে পেয়েছি অ-তালিকাভুক্ত কোম্পনির চেয়ে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো থেকেই তুলনামূলভাবে সরকারের রাজস্ব বেশি এসেছে। এজন্য কর কমিয়ে হলেও কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছি।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি’রোজারিও বলেন, দেশের সব ছোট ছোট বিনিয়োগগুলোকে একটি ফ্রেমে আনতে হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম হতে পারে পুঁজিবাজার। এমন একটি পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটের জন্য আমরা নতুন কিছুই পেলাম না। এটা খুবই হতাশাজনক।

তিনি বলেন, বাহিরের দেশগুলোতে যেখানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে কোম্পানির মূল্যায়ন বাড়ে বলে মনে করা হচ্ছে। সেখানে আমাদের দেশের কেম্পানিগুলো এখানে তালিকাভূক্ত হওয়াকে বোঝা মনে করছে। আমাদের এ অবস্থানটা ঠিক করতে হলে সরকারকে কিছুটা প্রণোদনা দিতে হবে।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, আমাদের দেশের শিল্পায়নে এখন পর্যন্ত যে বিনিয়োগুলো হয়েছে তার সিংহভাগই ব্যাংকের মাধ্যমে হয়েছে। এটা পুঁজিবাজারে মাধ্যমে হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু সেটা হয়নি। পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জায়গা তৈরি না হলে দেশের অর্থনীতিকে কখনোই স্ট্যাবেল একটা অবস্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। তাছাড়া দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য বন্ড মার্কেটের গুরুত্ব বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে জিরো কুপন বন্ডের মতো সব ধরনের বন্ডকে করমুক্ত করা উচিত।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তির বিষয়ে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু দেশে ব্যবসা করা সব বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আসার ব্যপারে অনেক আগে থেকেই বাধ্যতামূলক থাকা উচিত ছিলো। এসময় তিনি এ বড় কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনতে সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার জোর আহবান জানান।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, বিশ্বের বড় দেশগুলোতে পুঁজিবাজারকে অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেখানে আমাদের দেশে এটাকে কোনঠাসা করে রাখা হচ্ছে। কোনঠাসা হয়ে আছে। আমি বিশ্বাস করি, পুঁজিবাজারকে কোনঠাসা করে রাখা যাবে না, কোনঠাসা থাকবে না। কারণ এটার সঙ্গে দেশের সর্বস্থরের মানুষ আছে, অর্থনীতির ভবিষ্যৎ লুকিয়ে আছে।

অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে অর্থসূচক সম্পাদক এবং সিএমজেএফ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বলেন, আমরা যেখানে বলছি যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের একটি অভিযাত্রা শুরু হয়েছে। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মান করবো কিন্তু তার অর্থায়নের যে বড় একটি অংশ সেটি আনস্মার্ট এই বিষয়টা অকল্পনীয়। আপনি প্রথাগত যে ব্যাংক নির্ভর অর্থায়ন সেটি দিয়ে আপনি স্মার্ট বাংলাদেশের গৌরব অর্জন করবেন এটি কখনই সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, আমার সময় হচ্ছে এখন উন্নত দেশের তালিকায় যাওয়ার, এবং সে যাত্রায় আমাদের বিশাল এক বিনিয়োগের দরকার এবং সে বিনিয়োগ আমরা প্রথাগত ব্যাংক খাত থেকে নিবো, যেখানে কিছুদিন আগেই খবরে এলো ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। আপনি স্বল্প মেয়াদী আমানত নিয়ে দির্ঘমেয়াদী অর্থাইয়ন করবেন তাহ্লে তো এমন ঘটনা অবধারিত হবেই।

জিয়াউর রহমান আরও বলেন, পুঁজিবাজার থেকে উদ্যোক্তাদের কয়জন পালিয়ে গেছেন? কিন্তু ব্যাংক ঋণ নিয়ে পালানোর ঘটনা অগণিত। তাই এই বিষয়গুলো বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের নজরে আনা উচিৎ। বাজেট আসলে শুধু আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়, বাজেট সরকারের রাজনৈতিক দর্শন। আর সরকারের সেই দর্শনে যখন আমরা কোন একটি বিষয়ের উপস্থিতি দেখিনা, তখন সেই সেই সেক্টরটিকে উপেক্ষিত মনে হয়। কর হ্রাস বা বৃদ্ধি আসল বিষয় নয়, বিষয়টি হলো পুঁজিবাজার যে আমাদের বড় একটা সম্ভাবনার যায়গা, বড় একটি অংশ অর্থনীতির সেটি বাজেটের আলোচনায় অন্তত থাকা জরুরি। কিভাবে আমরা এই বাজারকে আগামীতে কাজে লাগাবো সেই আলোচনা থাকতে পারতো। আর যখনি এই বাজার নিয়ে কোন আলাপ-আলোচনা বাজেটে হয়না তখনি মনে হয় যে এ বাজার অবহেলিত। তখন মনে হয় যে সরকারের রাজনৈতিক এবং উন্নয়নের যে দর্শন সেখানে পুঁজিবাজার নেই।

 

 

অর্থসূচক/এমআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.