বাজেটে লাপাত্তা পাচারের টাকা দেশে ফেরানোর ইস্যু

পাচার হয়ে যাওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার তোলপাড় সৃষ্টিকারী ঘোষণা বছর না যেতেই মিইয়ে গেছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে দেওয়া এই ইস্যুটি সযত্নে এড়িয়ে গেছেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এই ইস্যুটির কোনো উল্লেখ নেই। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতাতেও বিষয়টি সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেছেন।

গত বছরের ৯ জুন জাতীয় সংসদে চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী পাচার হয়ে যাওয়া টাকা নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে বৈধ করার সুযোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন। বিষয়টি সারাদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্কের জন্ম দেয়। অর্থনীতিবিদরা বিষয়টিকে অন্যায্য বলে অভিহিত করেন। এটি টাকার পাচারকে উৎসাহিত করা এবং সৎ করদাতাদেরকে কর প্রদানে অনাগ্রহী করে তুলতে পারে বলে মন্তব্য করেন। এই অন্যায্য এবং বিতর্কিত সুবিধা দেওয়ার পরও পাচারের টাকা ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা নেই অভিমত প্রকাশ করেন তারা। এত সমালোচনার পরও চূড়ান্ত বাজেটে এই সুবিধা বহাল রাখা হয়।

পাচারের টাকা (অর্থমন্ত্রীর ভাষায় বিদেশে উপার্জিত টাকা) ফিরিয়ে আনার সুযোগ দেওয়ার যৌক্তিকতা প্রমাণে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় আগামী অর্থবছরে আমাদের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হতে পারে।

এমতাবস্থায়, আর্থিক নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অধিক বিচক্ষণতা ও দূরদর্শী পন্থা অবলম্বন করতে হবে। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকারি ব্যয় নির্বাহের জন্য এক দিকে আমাদের অধিক পরিমাণে রাজস্ব জোগান দিতে হবে, অন্য দিকে বেসরকারি খাতেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনতে হবে। এ অবস্থায় বিদেশে অর্জিত অর্থ ও সম্পদ অর্থনীতির মূল স্রোতে আনার মাধ্যমে বিনিয়োগ ও আর্থিক প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে তিনি আয়কর অধ্যাদেশে নতুন বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব দেন।

নতুন বিধানের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বিধান অনুযায়ী বিদেশে অবস্থিত যে কোনো সম্পদের ওপর কর পরিশোধ করা হলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ যে কোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করবে না। বিদেশে অর্জিত স্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনা না হলে এর ওপর ১৫ শতাংশ, বিদেশে থাকা অস্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনা না হলে ১০ শতাংশ ও বাংলাদেশে পাঠানো (রেমিটকৃত) নগদ অর্থের ওপর ৭ শতাংশ হারে করারোপের প্রস্তাব করেন তিনি। এ সুবিধা ২০২২ সালের ১ জুলাই হতে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।’

বাজেট বক্তৃতার এক সপ্তাহ আগে (২৬ মে, ২০২২) অর্থমন্ত্রী পাচারের টাকা ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘দেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ টাকা চলে যাচ্ছে, কিন্তু তা ফেরত আনতে পারছি না। যারা টাকা দেশ থেকে নিয়ে গিয়ে বিদেশে রেখেছে, তারা যেন ওই টাকা দেশে ফেরত আনতে পারে, সে জন্য আগামী বাজেটে বিশেষ সুবিধা দেয়া হবে।’

আগের বাজেটে আনা বড় ও মৌলিক কোনো পরিবর্তনের ফলাফল সম্পর্কে পরবর্তী বাজেটে আলোকপাত করা একটি সাধারণ রেওয়াজ। কিন্তু আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় পাচারের টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার মতো ‘বিচক্ষণতাপূর্ণ ও দূরদর্শী’ উদ্যোগ সম্পর্কে টুঁ শব্দটিও করেননি অর্থমন্ত্রী।

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.