প্রস্তাবিত বাজেট ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও দেশীয় শিল্প’ বিকাশে সহায়ক

রংপুর চেম্বারের তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়া

বৃহস্পতিবার (০১ জুন) লাগামহীন দ্রব্যমূল্য, মুদ্রাস্ফীতি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে মন্দা, ডলার সংকট, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির এমন সংকটকালে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শিরোনাম শীর্ষক প্রস্তাবিত বাজেটে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়গুলোকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখাসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থার ভারসাম্য রক্ষার যে কৌশল তুলে ধরা হয়েছে তা অত্যন্ত সাহসী ও সময়োপযোগী বলে মনে করছে রংপুর চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি (আরসিসিআই)।

প্রস্তাবিত বাজেটে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বৃদ্ধি করার পাশাপাশি জ্বালানি তেলের অগ্রিম শুল্ক প্রত্যাহার ও ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পণের উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত- উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য করপোরেট করের হার কমিয়ে আনার পদক্ষেপ অন্তর্ভূক্ত থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বহুগুণে ত্বরান্বিত হবে বলে রংপুর চেম্বার মনে করে। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে হাতে তৈরি বিস্কুটের ভ্যাট অব্যাহতি সীমা বৃদ্ধি, মিষ্টান্নভান্ডার সেবার ওপর ভ্যাট অব্যাহতি, ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্মার ওষুধে উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি, আমদানি ও রপ্তানিতে ব্যবহৃত কনটেইনার ব্যবসাকে উৎসাহ করতে কনটেইনার আমদানিতে করভার হ্রাস হওয়ায় জনজীবনে অনেকটা স্বস্তি আসবে বলে রংপুর চেম্বার মনে করে। প্রস্তাবিত বাজেটে ব্লেন্ডার, জুসার, প্রেশার কুকার, ওয়াশিং মেশিন এবং মাইক্রোওয়েভ ও ইলেকট্রিক ওভেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও কম্পিউটার পণ্য উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় শিল্প বিকাশ হবে বলে রংপুর চেম্বার মনে করে।

সংগঠনটির সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু  প্রস্তাবিত বাজেট স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ, কর্মসংস্থানমুখী এবং দেশীয় শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন। তিনি বাজেট বাস্তবায়নে দুর্নীতি প্রতিরোধ, অর্থ পাচার রোধ এবং প্রবৃদ্ধির সুফল যেন সুষমভাবে বন্টন হয় সেদিকে নজর দেয়ার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের পরবর্তী যুগ স্মার্ট বাংলাদেশ। কিন্তু সেখানে পৌঁছতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে নজর দেয়া জরুরি বলে মনে করে। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি যে হারে বেড়েছে সামাজিক সুরক্ষা ভাতা সেভাবে বাড়েনি। শুধু খাদ্য ছাড়াও মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটাতে বাসস্থান, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা প্রয়োজন। সামাজিক সুরক্ষার অপ্রতুলতা আগেও ছিল, এখনো রয়েছে। তাই তিনি সংশোধিত বাজেটে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার অনুরোধ জানান।

প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আহরণের যে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা বড় ধরনের সংস্কার ছাড়া অর্জন করা সম্ভব নয় বলে রংপুর চেম্বার মনে করে। তবে সাধারণ মানুষকে চাপে ফেলে রাজস্ব বাড়ানোর কৌশল জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে বলে রংপুর চেম্বার মনে করে। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ও পরিচালন ব্যয় দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রাজস্ব সংগ্রহ কাঙ্খিত হারে বৃদ্ধি না পেলে সরকারের ব্যাংক নির্ভরতা আর্থিক খাতকে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ফেলবে। তবে বেসরকারি বিনিয়োগের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রস্তাবিত বাজেটে করজাল বৃদ্ধির যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা অত্যন্ত যুগোপযোগী বলে রংপুর চেম্বার মনে করে।

প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার যে প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে মন্তব্য করে রংপুর চেম্বারের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বৈদেশিক উৎস, অবকাঠামো তহবিল, অবকাঠামো বন্ড ও অন্যান্য আর্থিক উপাদানের ওপর জোর দেওয়ার অনুরোধ জানান। কেননা বেসরকারি খাত বাধাগ্রস্থ হলে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে বলপয়েন্ট কলমের ওপর উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কলমসহ সব ধরনের শিক্ষাসামগ্রীর দাম এমনিতেই বেড়েছে। এর ওপর আবার নতুন কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ওপর চাপ বাড়বে। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে নিত্যব্যবহার্য গৃহস্থালিসামগ্রী যেমন-প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র, টয়লেট টিস্যু, এলপিজি সিলিন্ডারের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর ফলে সাধারণ মানুষ দিশে হারা হয়ে পড়বে বলে রংপুর চেম্বার আশংকা প্রকাশ করছে। তাই সংশোধিত বাজেটে বিষয়গুলো পুর্নবিবেচনার অনুরোধ জানাচ্ছি।

প্রস্তাবিত বাজেটে ২০৪১ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ব্যাপক পরিকল্পনা থাকলেও সারাদেশে প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বাড়লেও রংপুর বিভাগে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দারিদ্র্য। প্রস্তাবিত বাজেটে  অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া রংপুর অঞ্চলের দারিদ্র নিরসন ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কৃষি নির্ভরতার পাশাপাশি শিল্প নির্ভরতা বাড়াতে আলাদা ঋণ, কর ও ভ্যাট নীতি প্রণয়ন, তিস্তা মহাপরিকলল্পনা বাস্তবায়ন, রংপুরে প্রস্তাবিত স্পেশাল ইকোনমিক জোন ও উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নের স্বার্থে ‘‘নর্থ বেঙ্গল ডেভেলপমেন্ট মিনিস্ট্রি’’ গঠনের মত বিষয়গুলো অর্ন্তভূক্ত থাকা উচিত ছিল বলে রংপুর চেম্বার মনে করে। তাই রংপুর অঞ্চলের দারিদ্র্য নিরসন ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে রংপুর চেম্বারের প্রস্তাবগুলো সংশোধিত বাজেটে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য রংপুর চেম্বারের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

পরিশেষে রংপুর চেম্বারের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু বলেন,  বাজেটের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমূহ অর্জনের নিমিত্তে বেসরকারী বিনিয়োগে প্রাণ ফেরানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখাসহ আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসনে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা, পন্থা, অর্থের সুষম বণ্টন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক কর্মসূচি ও কৌশল এমনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে যাতে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে ইতিবাচক সুফল বয়ে আনতে পারে রংপুর চেম্বার সে কামনা করছে।

অর্থসূচক/ এইচএআই

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.