দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের দেশগুলি সবার আগে যে জোট গঠন করেছিল, তার নাম ছিল ‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ’৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন তখনো স্বপ্নের পর্যায়েও ছিল না৷ আজ সেই পরিষদের সদস্যসংখ্যা ৪৬৷ ইউক্রেনের উপর হামলার কারণে রাশিয়াকে বহিষ্কার করা হয়েছে৷ বেলারুশের সদস্যপদ আপাতত সাসপেন্ড করা হয়েছে৷
এই নিয়ে চার বার ‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ’-এর শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো৷ ১৮ বছর পর আইসল্যান্ডের রাজধানী রেইকইয়াভিকে শীর্ষ নেতারা মিলিত হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি ও তথ্যপ্রমাণ নথিভুক্ত করতে এক ‘রেজিস্টার অফ ড্যামেজ’ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিলেন৷ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার হামলার শুরু থেকে ইউক্রেনে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেগুলি নথিভুক্ত করে ভবিষ্যতে রাশিয়ার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে সেই তালিকা কাজে লাগবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ জাতিসংঘের এক প্রস্তাবের ভিত্তিতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷ ‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ’-এর মহাসচিব মারিয়া পেইসিনোভিচ এই রেজিস্টার গঠনের সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে বর্ণনা করেন৷
৪৬ সদস্যের মধ্যে ৪০টি দেশ সেই সিদ্ধান্তের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে৷ শুধু আর্মেনিয়া, আজেরবাইজান, বসনিয়া-হ্যারৎসোগোভিনা, সার্বিয়া, হাঙ্গেরি ও তুরস্ক আপাতত সেই উদ্যোগে শামিল হচ্ছে না৷ ‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ’ এই উদ্যোগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণও নিশ্চিত করেছে৷
নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে আপাতত তিন বছরের জন্য ‘ড্যামেজ রেজিস্ট্রি’ দফতর কাজ করবে৷ ইউক্রেনেও এক ‘ফিল্ড অফিস’ খোলা হবে৷ ‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ’, তাদের সহযোগীসহ যে কোনো দেশ সেই উদ্যোগে অংশ নিতে পারে৷ তবে রেজিস্টারের অর্থায়নের জন্য তাদের কাছে চাঁদা প্রত্যাশা করা হবে৷ এই মুহূর্তে শুধু ক্ষয়ক্ষতি নথিভুক্ত করা হলেও ভবিষ্যতে সেই কাঠামোর ক্ষমতা বাড়িয়ে আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে৷ এক কমিশন ও তহবিল গঠন করার প্রস্তাবও রয়েছে, যদিও সেগুলির কাঠামো এখনো অস্পষ্ট৷
রাশিয়া স্বেচ্ছায় ক্ষতিপূরণ না দিলে বিদেশে সে দেশের সম্পদ কাজে লাগিয়ে অর্থ সংগ্রহের প্রস্তাব একাধিকবার শোনা গেছে৷ কিন্তু আইনি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এমন পদক্ষেপ অত্যন্ত কঠিন হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এই রেজিস্টার গঠনের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, নৃশংস কার্যকলাপের জন্য রাশিয়াকে দায়বদ্ধ করার আন্তর্জাতিক উদ্যোগের ক্ষেত্রে এটা একটা প্রয়োজনীয় অবদান৷ তিনি কাউন্সিল অফ ইউরোপ-এর অর্থায়েনের জন্য জার্মানির নিয়মিত মাসুলের পাশাপাশি এককালীন এক কোটি ইউরো দিচ্ছেন৷ ইউরোপে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের অভিভাবক হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানের হাত আরও শক্ত করার অঙ্গীকার করেন জার্মান চ্যান্সেলর৷ ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন ভবিষ্যতে কাউন্সিল অফ ইউরোপ, ইইউ এবং ইইউ-তে যোগদানের পদপ্রার্থীদের মধ্যে আরও নিবিড় সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, ডিপিএ, এএফপি
অর্থসূচক/এইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.