আইসিএমএবি’র চতুর্বিংশতিতম সমাবর্তন উদযাপিত

আড়ম্বর ও উৎসবমুখর পরিবেশে ইনস্টিটিউট অফ কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) চতুর্বিংশতিতম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবর্তন রবিবার (১৪ মে) রেডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেন হোটেলের গ্র্যান্ড বল রুমে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী এমপি আইসিএমএবি সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সদস্যদের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, শেখ হাসিনার সঠিক ও দূরদর্শী নির্দেশনায় বাংলাদেশ আজ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। তিনি বলেন, ব্যবসার ব্যয় সংকোচন এবং সম্পদের অপচয় ও অপব্যবহার কমাতে কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টসগণের ভূমিকা অপরিহার্য। মন্ত্রী মহোদয় আরো বলেন যে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই দক্ষ সিএমএগণ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি আরো বলেন যে, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে গত কয়েক বছরে বিশ্ব একের পর এক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে একটি কঠিন সময় অতিক্রম করেছে। বর্তমানে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ আমাদের আরেকটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে বাধ্য করেছে। এটা বলা বাহুল্য যে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এই বিশেষ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন বেশী হয়েছে। তাই সিএমএদের মতো দক্ষ মানব সম্পদ ব্যবসার ব্যয় সংকোচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও সদস্যরা তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা ইতিবাচকভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করবেন।

সমাবর্তন বক্তা মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী তার বক্তৃতায় বলেন যে সিএমএগণের পেশাগত জ্ঞান রয়েছে এবং এটি যে কোন কোম্পানির দুর্বলতা চিহ্নিত করতে পারে তা থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য প্রতিকারের পরামর্শ দিয়ে কোম্পানিগুলোকে লাভজনক করার জন্য যথযথ সহায়তা প্রদান করতে পারে। সরকারি বা বেসরকারি যে কোন প্রতিষ্ঠান হোক না কেন পেশাগত দক্ষতা যে কোনও সংস্থার পারফরমেন্সকে এগিয়ে রাখতে সাহায্য করে। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ অর্জনের জন্য দক্ষ কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস (সিএমএ) তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করে আসছে। নিঃসন্দেহে আইসিএমএবি থেকে অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় কার্যকর অবদান ও ভূমিকা রাখবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের অধীনে একটি পেশাদার অ্যাকাউন্টিং সংস্থা হিসেবে আইসিএমএবি পেশাদার অ্যাকাউন্ট্যান্ট প্রস্তুত করছে যারা কর্পোরেট এবং পাবলিক সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তিনি আরও বলেন যে করোনা মহামারীর সময়ে এই হিসাবরক্ষকগণ সংস্থাগুলির আর্থিক অবস্থাকে মজবুত রাখতে তাদের উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন যা দেশকে সঠিকপথে পরিচালিত করতে সহায়তা করেছে। এই পেশাজীবীদের যথাযথ সেবায় বাংলাদেশের অর্থনীতি অত্যন্ত উপকৃত হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি আশা করেন যে আইসিএমএবি বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তর করতে পেশাদারিত্বের সঙ্গে যোগ্য ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।

আইসিএমএবি সভাপতি মোঃ আব্দুর রহমান খান এফসিএমএ তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশকে শিল্পোন্নত, উন্নত ও স্মার্ট জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে জাতির পিতা এবং তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সংগতি রেখে আইসিএমএবি’র ভিশন নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন ‘সিএমএ’দের  পেশাগত জ্ঞান এবং দক্ষতা অবশ্যই ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে “এসডিজি” এর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করতে সহায়তা করবে। এ ক্ষেত্রে ব্যয়-ব্যবস্থাপনা এবং হিসাবরক্ষকদের পরিষেবা অতুলনীয়। বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির দ্রুত প্রবৃদ্ধির জন্য, দেশে দক্ষ অ্যাকাউন্টিং পেশাদারদের প্রয়োজন এবং ইনস্টিটিউট তার শুরু থেকেই এই জাতীয় পেশাদার হিসাবরক্ষক তৈরি করতে অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি সদস্যদের তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে নৈতিকতার উপর জোর দেন এবং পেশাগত আচরণবিধি মেনে চলার কথা স্মরণ রাখতে বলেন।

বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি অনুষ্ঠানে মোট ৪৮৬ জন সিএমএ ডিগ্রিধারীর হাতে সনদপত্র তুলে দেন। মোট ১৩জন শিক্ষার্থী ১৪ বিভাগে পুরস্কার গ্রহণ করে। সার্টিফিকেট প্রদান অনুষ্ঠান এবং ফটোসেশন পর্বের পর সকল আমন্ত্রিত অতিথিগণ নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন। আইসিএমএবি সমাবর্তন ২০২৩ এর আহবায়ক ও প্রাক্তন সভাপতি, আইসিএমএবি মোহাম্মদ সেলিম এফসিএমএ’র স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এবং পরিশেষে আইসিএমএবি’র সচিব মোঃ কাউসার আলম এফসিএমএ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

অর্থসূচক/ এইচএআই

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.