মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কেজরিওয়ালের বড় জয়

দিল্লি ও মহারাষ্ট্র নিয়ে দুইটি সূদূরপ্রসারী রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই রায়ে নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বড় জয় পেলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিল, জমি, আইন-শৃঙ্খলা ও পুলিশ বাদ দিয়ে বাকি সব বিষয়ে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি লেফটোন্যান্ট গভর্নর (এলজি)। অফিসারদের বিষয়ে রাজ্য সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে।

মহারাষ্ট্রে উদ্ধব ঠাকরে সরকার প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের রায়, রাজ্যপাল ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও উদ্ধব সরকারকে ক্ষমতায় পুনর্বহাল করা যাবে না। কারণ, উদ্ধব নিজে থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন।

প্রশ্ন ছিল, দিল্লিতে আসল ক্ষমতা কার হাতে থাকবে, নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী নাকি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি এলজি-র হাতে। কেন্দ্রীয় সরকারের মত ছিল, দিল্লি হলো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। ফলে এখানে সব ক্ষমতা এলজি-র হাতেই থাকবে। সেই অধিকারবলে অতীতে কেজরিওয়াল সরকারের একাাধিক সিদ্ধান্ত আটকে দিয়েছেন এলজি। কেজরিওয়ালের অভিযোগ ছিল, এলজি-কে সামনে রেখে মোদী সরকার এই সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এই বিরোধ চরমে ওঠার পর কেজরিওয়াল সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।

প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, যদি অফিসাররা মন্ত্রীদের কাছে রিপোর্ট না করেন, তাহলে তারা তো মন্ত্রীর কথাই শুনবেন না। তাহলে যৌথ দায়িত্বের নীতি ভাঙা হবে।

সর্বোচ্চ আদালত স্পষ্টভাবে বলেছে, দিল্লির নির্বাচিত সরকারের পরামর্শ মেনে চলতে এলজি বাধ্য। রাষ্ট্রপতি এলজি-র হাতে কিছু ক্ষমতা দিয়েছেন মানে এই নয় যে, তিনি সব ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন। রায়ে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার তো জনগণ ও বিধানসভার কাছে দায়বদ্ধ। কিন্তু তারা যদি প্রশাসনিক অফিসারদেরই নিয়োগ করতে না পারে, তাহলে ওই নীতি লঘু হয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের মতে, যদি কোনো অফিসার সরকারের ডাকে সাড়া না দেন, তাহলে ওই দায়বদ্ধতার নীতি লঘু হয়ে যায়। যদি কোনো অফিসার বলেন, তিনি রাজ্য সরকারের কথা শুনবেন না, তাহলে যৌথ দায়িত্বের নীতি ভাঙা হয়। যদি তারা মনে করেন, তাদের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার অপমান করছে, তাহলে তো তারা মনে করছেন, তারা দায়বদ্ধই নন।

সুপ্রিম কোর্টের কাছে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের আবেদন ছিল, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে ও ১৫ জন বিধায়ক বেআইনিভাবে দল ছেড়েছেন। তাই তাদের বিধায়কপদ বাতিল করা হোক। আর উদ্ধবের সরকারকে ফিরিয়ে আনা হোক।

প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চের রায়, তারা উদ্ধব ঠাকরে সরকারকে আবার ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে পারবেন না। কারণ, উদ্ধব সেসময় নিজে থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। আর একনাথ শিন্ডে ও অন্য বিধায়কদের সদস্যপদ খারিজ করার বিষয়টি স্পিকারের অধিকারের মধ্যে পড়ে। যতক্ষণ পর্যন্ত বৃহত্তর বেঞ্চ কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত স্পিকারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত।

কিন্তু এর পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যপালের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে। বিচারপতিদের মতে, তিনি সেসময় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা একনাথ শিন্ডেদের পক্ষে গেছে। ঠাকরে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত নেয়া ভুল ছিল। এই সিদ্ধান্ত আইনানুযায়ী নেয়া হয়নি। রাজ্যপালের কাছে এমন কোনো প্রমাণ ছিল না, যা দিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়া যায়।

সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, অভিযুক্ত বিধায়করা সদস্যপদ হারাবেন কি না, তা স্পিকার ঠিক করবেন।

উদ্ধব জানিয়েছেন, তিনি নৈতিক কারণে ইস্তফা দিয়েছিলেন। শিন্ডে ও তার অনুগামী বিধায়করা দল ও বালাসাহেব ঠাকরের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ঠাকরে বলেছেন, ‘হতে পারে, আমার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত আইনি দৃষ্টিতে ভুল ছিল। কিন্তু নৈতিক দৃষ্টিতে একেবারে ঠিক ছিল। আমি আমার জন্য আইনি লড়াই করিনি, রাজ্যের মানুষের জন্য করেছি। সেখানে নৈতিক জয় আমার হয়েছে।”

তার বক্তব্য, ‘যদি শিন্ডে ও দেবেন্দ্র ফড়নবিসের বিন্দুমাত্র নৈতিকতা থাকে, তাহলে তাদের পদত্যাগ করা উচিত।’ সূত্র: ডিডাব্লিউ, পিটিআই, এএনআই

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.