৩ কোম্পানির শেয়ারে ভেলকি, কারসাজির ঘ্রাণ!

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন খাতের একাধিক কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে বেশ অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে। গতকাল সোমবারও (৮ মে) এই ধারা বজায় ছিল। এসব কোম্পানির মধ্যে অন্তত: তিনটির শেয়ারে গতকাল বেশ বড় রকমের ভেলকি দেখা গেছে। ঠিক আগের দিনও ফ্লোর প্রাইসে (শেয়ারের দামে বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন সীমা) গড়াগড়ি খাওয়া কোম্পানি তিনটির কোনোটি উঠে এসেছে লেনদেনের শীর্ষে, কোনোটি শীর্ষে উঠেছে শেয়ারের দর বৃদ্ধিতে।

কোম্পানি তিনটি হচ্ছে- জাহিন স্পিনিং, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন (জেননেক্সট) ও প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল লিমিটেড (পিটিএল)। কোম্পানি তিনটির মধ্যে প্রথম দুটি গত কয়েক প্রান্তিকে টানা লোকসান করেছে। তৃতীয়টির বিদ্যুৎ ইউনিটের ব্যবসাও ভাল যাচ্ছে না।

জাহিন স্পিনং:
জাহিন স্পিনিং মিলস লিমিটেডের শেয়ার গত ৩ মে পর্যন্ত ফ্লোর প্রাইসে আটকে ছিল। গত রোববার (৭ মে) এই শেয়ার প্রথম ফ্লোর থেকে উঠে আসে। এদিন শেয়ারটির দাম ১ শতাংশ বেড়ে ৯ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ১০ টাকায় উঠে আসে। আর গতকাল সোমবার (৮ মে) শেয়ারটির দাম ১০ শতাংশ বেড়ে সার্কিটব্রেকারের সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে।

এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) জাহিন স্পিনিংয়ের ৫১ লাখ ৯৩ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়। অথচ ২ দিন আগে মাত্র ২২ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। আর ৪ দিন আগে কেনাবেচা হয়েছিল মাত্র ২০৫টি শেয়ার।

কোম্পানিটি ২০২০ সাল থেকে টানা লোকসান দিয়ে চলেছে। ওই বছর কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৩ টাকা ৩৯ পয়সা। পরের বছর লোকসান হয় ২ টাকা ৫২ পয়সা। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে শেয়ার প্রতি ১ টাকা ২৮ পয়সা লোকসান দিয়েছে কোম্পানিটি। আর ২০১৯ সালের পর শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশও দেয়নি কোম্পানিটি।

তবে চলতি হিসাববছরে কিছুটা ইতিবাচক ধারায় আছে কোম্পানির পারফরম্যান্স। ডিএসইর তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম ৩ প্রান্তিক তথা ৯ মাসে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ৮ পয়সা আয় করেছে।

জেনারেশন নেক্সট:
জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনের শেয়ার রোববার পর্যন্ত ফ্লোর প্রাইসে ছিল। ওইদিন ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল ৬ টাকা। গতকাল সোমআর (৮ মে) শেয়ারটির দাম ১০ শতাংশ বেড়ে ৬ টাকা ৬০ পয়সা হয়। সোমবার ডিএসইতে কোম্পানিটির ১ কোটি ২৩ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়। এর আগের ৪ কার্যদিবসে কোম্পানিটির গড়ে ১ লাখ শেয়ারও কেনাবেচা হয়নি কোম্পানিটির। আর মাত্র ৮ দিন আগে ২৪ মে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনের সংখ্যা ছিল মাত্র ২ হাজার ৮৫৪টি।

সর্বশেষ তিন অর্থবছরে জেনারেশন নেক্সটের শেয়ার প্রতি আয় ছিল মাত্র ১ পয়সা। কোম্পানিটি ২০২২ সালে মাত্র ১ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। আগের দুই বছরে কোনো লভ্যাংশই দেয়নি।

পিটিএল:
প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল লিমিটেডের (পিটিএল) শেয়ারও রোববার পর্যন্ত ফ্লোর প্রাইসে ছিল। সোমবারও এর শেয়ারের দাম ফ্লোরের উপরে আসতে পারেনি। তবে লেনদেনে দেখিয়েছে চমক। এক সপ্তাহ আগেও দিনে যে কোম্পানির এক হাজার শেয়ারও কেনাবেচা হয়নি, গতকাল সেই কোম্পানির ৫০ লাখের বেশি শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। বিক্রিত শেয়ারের মোট মূল্য ছিল ৩৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। সোমবার ডিএসইতে লেনদেনে সব কোম্পানির শীর্ষে ছিল পিটিএলের অবস্থান।

তবে মজার বিষয় হচ্ছে, এত বিপুল সংখ্যক শেয়ার লেনদেন হলেও সোমবার পিটিএলের শেয়ারের দরে কোনো পরিবর্তন আসেনি। আগেরদিন ডিএসইতে শেয়ারটির ক্লোজিং মূল্য ছিল ৭৭ টাকা। সোমবারও এই দরে শেষ হয় শেয়ারটির লেনদেন। যদিও দিনের এক পর্যায়ে শেয়ারটির দাম বেড়ে ৭৮ টাকায় উঠেছিল, কিন্তু ওই দর শেষ পর্যন্ত টেকেনি।

লেনদেনে অস্বাভাবিকতা:
বাজার বিশ্লেষকরা এই ধরনের লেনদেনকে অস্বাভাবিক মনে করছেন। তাদের মতে, এর পেছনে বড় রকমের কারসাজি থেকে থাকতে পারে। কারণ একদিন বা এক সপ্তাহ আগে যে কোম্পানির ১ হাজার শেয়ারও কেনাবেচা হয়নি, কোনো দৃশ্যমান কারণ ছাড়া হঠাৎ সেগুলোর লাখ লাখ শেয়ার কেনাবেচা স্বাভাবিকভাবে হতেই পারে না। একইভাবে ফ্লোরে পড়ে থাকা শেয়ারের দাম হঠাৎ এতটা বেড়ে যাওয়ারও কোনো যুক্তি নেই। কারসাজি চক্র বাজার থেকে বিপুল সংখ্যক শেয়ার কিনে নিয়ে এখন নানা কৌশলে কৃত্রিম লেনদেনের মাধ্যমে এ অবস্থা সৃষ্টি করেছে। তারা হয়তো কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম দারেকটু বাড়ানোর চেষ্টা করবে। এসব দেখে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হলে এক পর্যায়ে তাদের কাছে এসব শেয়ার বিক্রি বিপুল মুনাফা হাতিয়ে নেবে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.