রিজার্ভ ও বাণিজ্যে ডলারের আধিপত্য কমছে

বিশ্বের মোট বৈশ্বিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং বাণিজ্যের অর্ধেকেরও বেশি পরিচালিত হয় মার্কিন ডলারে। তবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে আন্তর্জাতিক লেনদেনে ডলারের আধিপত্য কমে আসছে। অনেক দেশ বিকল্প মুদ্রা ব্যবহার করছে।

বৈশ্বিক মুদ্রা হিসেবে বিনিয়োগকারীদের জন্য কয়েক দশক ধরে পছন্দের শীর্ষে মার্কিন ডলার। নানা কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে জনপ্রিয় মুদ্রাটি। এরই মধ্যে ব্রিকস জোট ডলারের বিকল্প হিসেবে নতুন একটি বৈশ্বিক মুদ্রা চালুর কথা ভাবছে।

সম্প্রতি লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল পলিসি ইনস্টিটিউটের ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্সের অধ্যাপক পাওলা সুবাচ্চি এএফপিকে বলেন, অনেক উন্নয়নশীল দেশের ডলারের ওপর কম নির্ভরশীল হওয়ার ইচ্ছা আছে। বিশেষ করে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে।

এদিকে ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল (ডব্লিউজিসি) ‘দ্য রেলেভেন্স অব গোল্ড অ্যাজ আ স্ট্র্যাটেজিক অ্যাসেট ২০২৩’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, গত দুই দশকে নিরাপদ বিনিয়োগ, কৌশলগত সম্পদ ও বিলাসি পণ্য হিসেবে স্বর্ণ বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সম্পদ বৃদ্ধি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ পোর্টফোলিওতে এর ভূমিকা জোরদার হচ্ছে। বিশ্বে ১৯৭১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত স্বর্ণের বিনিয়োগে বছরে প্রায় ৮ শতাংশ হারে মুনাফা হয়েছে। এতটা লাভ বন্ড, ইক্যুইটি ও অন্যান্য পণ্যে পাওয়া যায়নি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২ থেকে ৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতির বছরগুলোয়ও বিশ্বে সোনার দাম ৮ শতাংশ হারে বেড়েছে। ২০২২ সালে বিশ্ববাজারে দৈনিক গড়ে ১৩ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যমানের সোনা কেনাবেচা হয়েছে। বিশ্বে বিনিয়োগকারী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর কাছে বর্তমানে যে পরিমাণ সোনা মজুত আছে, তার মূল্যমান ৪ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন বা ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার।

চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের দাম ডলারের পরিবর্তে ইউয়ানে পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর্জেন্টিনা। দেশটিতে ডলারের রিজার্ভ প্রকটভাবে কমে যাওয়ায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এপ্রিল মাসে তারা ১০০ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের চীনা পণ্যের আমদানি মূল্য ডলারের পরিবর্তে ইউয়ানে পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তারপর থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৭৯ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য আমদানি মূল্য ইউয়ানে পরিশোধ করা হবে।

রিজার্ভে ও লেনদেনে ডলারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া মুদ্রাগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউরোপের ইউরো, রাশিয়ার রুবল, চীনা ইউয়ান, ভারতীয় রুপি ইত্যাদি। এরই মধ্যে বিশ্বের পাঁচটি উন্নয়নশীল দেশের জোট ব্রিকস বিশ্বব্যাপী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত সংরক্ষণে মার্কিন ডলারের যুগ যুগের আধিপত্য কমাতে মাঠে নেমেছে।

আগামী আগস্ট মাসের শেষ দিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় পরবর্তী ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তাতে নতুন অনেকগুলো দেশকে এই জোটের সদস্য করা এবং নতুন বৈশ্বিক মুদ্রা চালুর বিষয়ে বড় সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এর আগে আগামী ২ ও ৩ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে ব্রিকস জোটের একটি বৈঠক হবে। তাতে জোটের বহর বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হবে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৯ সালে বিশ্বে মার্কিন মুদ্রা গ্রিনব্যাকে রিজার্ভ ছিল মোট ৭১ শতাংশ। ২০২১ সালে তা ৫৯ শতাংশে নেমে এসেছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেম সুইফটের হিসাবে, চলতি মাসে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৪২ শতাংশ ডলারে হয়েছে। ৩৩ শতাংশ ক্ষেত্রে ইউরো ব্যবহার হয়েছে। মাত্র দুই শতাংশ লেনদেনে চীনা ইউয়ান ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ডলারের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আরএমবিকে এখনও দীর্ঘ পথ যেতে হবে।

অর্থসূচক/এমএইচ

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.