দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা। এজেন্ট ব্যাংকিং চালু হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ গ্রামীণ অর্থনীতি বেশ চাঙা হচ্ছে। প্রবাসীরা সহজেই অর্জিত আয় এরমাধ্যমে দেশে পাঠাতে পারেন। তবে ফেব্রুয়ারিতে এজেন্টে আগের মাসের তুলনায় প্রবাসী আয় কমেছে ৮৬৭ কোটি টাকা।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২১ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা রেমিট্যান্স সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসে আসে ১ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে এজেন্টের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছিলো ২ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে এজেন্ট সেবায় প্রবাসী আয় কমেছে ৮৬৭ কোটি টাকা।
সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোয় ঋণ জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ পায়। ব্যাংক খাতের এমন অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাবের আমানতে কিছুটা কমেছিলো। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে আমানতের পরিমাণ কিছুটা বাড়লেও কমেছে ঋণ বিতরণ।
জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাবে রাখা আমানতের পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। ২০২২ সালের একই মাসে যার পরিমাণ পরিমাণ ছিলো ২৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত বেড়েছে ৬ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা।
দেশের ব্যাংক খাতে ২০১৪ সালে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয়। বর্তমানে এই সেবার গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৮৩ লাখ ৬৫ হাজার ৮৮১টি। দেশব্যাপী পাড়া-মহল্লা ও হাটবাজারে এরকম এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩৭৬টি। আর এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট বেড়ে হয় ২১ হাজার ৪৫টি।
এজেন্ট ব্যাংকিং আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও ব্যয়সাশ্রয়ী হওয়ায় জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এজেন্ট আউটলেটে একজন গ্রাহক সহজেই তার হাতের আঙুলের স্পর্শের মাধ্যমে হিসাব পরিচালনা করতে পারেন। তাই গ্রামীণ জনপদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যকরী একটি উদ্যোগ বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করে ব্রাজিল। আর বাংলাদেশে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয়। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনাসংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে। নীতিমালা অনুযায়ী, এজেন্ট ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে প্রত্যেক এজেন্টের একটি চলতি হিসাব থাকতে হয়। এ সেবার মাধ্যমে ছোট অঙ্কের অর্থ জমা ও উত্তোলন করা যায়।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স স্থানীয় মুদ্রায় বিতরণ, ছোট অঙ্কের ঋণ প্রদান ও আদায় এবং এককালীন জমার কাজও করেন এজেন্টরা। তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন উপযোগ সেবার বিল পরিশোধের পাশাপাশি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোর অর্থও উত্তোলন করা যায়। এ ছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব খোলা, ঋণ আবেদন, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের নথিপত্র সংগ্রহ করতে পারেন এসব এজেন্ট। তবে এখনো বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের কোনো সুযোগ নেই এজেন্টদের।
অর্থসূচক/এমএইচ/ এমএস



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.