কাগজ ও প্রকাশনা খাতে ভর্তুকি দেওয়া দরকার: আনু মুহাম্মদ

লাইব্রেরি নেটওয়ার্ক ভালো থাকলে বই বিক্রি ও পাঠক বাড়ে। এক্ষেত্রে দেখতে হবে সরকার কি ধরনের বই ক্রয় করছে। বেশি বই কিনে সরকার যদি পাঠাগারে দেয় তাহলে পাঠকদের জ্ঞান বাড়বে। বিদ্যুৎ খাত সহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কাগজ ও প্রকাশনা খাতেও ভর্তুকি দেওয়া উচিৎ। এটি না করলে শিক্ষা ও সংস্কৃতি শঙ্কার মধ্যে পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

শনিবার (৮ এপ্রিল) রাজধানীর পাঠক সমাবেশ সেন্টারে একুশ শতকে পুঁজি বইয়ের প্রকাশ অনুষ্ঠানে আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দ্য প্রকাশন ও সমাজপাঠ যৌথভাবে বইটি প্রকাশ করেছে।

ফরাসী অর্থনীতিবিদ থমাস পিকেটির মহাকাব্যিক বই ‘ক্যাপিটাল ইন দা টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি’। বইটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন অর্থনীতির ছাত্র আবিদ নাহার খন্দকার। তিনি দীর্ঘ তিন বছর ধরে বইটি অনুবাদ করেছেন। মুখবন্ধ লিখেছেন বাংলাদেশের প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এরকম একটি বই প্রকাশ আমাদের আশা জাগায়। আমরা যখন প্রথম ক্রয় করে বই পড়া শুরু করি, তখন অনেক কষ্টে বের করা হতো। তখন ১২০০ বই ছাপার একটা নিয়ম ছিলো এবং ধরাই হতো যে সব বই বিক্রি হবে। এখন আমাদের স্কুল-কলেজ বেড়েছে, শহর বড় হয়েছে এবং জিডিপিও বাড়ছে। এরপরেও ৩০০ থেকে ৪০০ কপি বই বের করা হয়। এত কম বই বের হয় কেন। লাইব্রেরি নেটওয়ার্ক ভালো থাকা দরকার। এতে বই বিক্রি ও পাঠক বাড়ে। এক্ষেত্রে দেখতে হবে সরকার কি ধরনের বই ক্রয় করছে। সরকারের উদ্যোগ খুবই দরকার। এধরনের বই কিনে সরকার যদি পাঠাগারে দেয় তাহলে পাঠকদের জ্ঞান বাড়বে। বিদ্যুৎ খাত সহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কাগজ ও প্রকাশনা খাতেও ভর্তুকি দেওয়া উচিৎ।

অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, প্রকাশ করার জন্য এই বইটা বাছাই করা খুবই ভালো উদ্যোগ হয়েছে। তবে এই বই বিক্রি করে ব্যবসা হবে না বললেই চলে। কারণ ৭০০ পৃষ্ঠার বইয়ের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। সাধারণ মানুষ এত দাম দিয়ে এই বই কিনবে না। বইটি পড়তে ও বুঝতে কাউকে অনেক বেশি জ্ঞানী হতে হবে না। এছাড়া অর্থনীতিও খুব ভালো জানতে হবে না। বইটির বিষয়বস্ত খুব সহজেই বোঝা সম্ভব। আমি ২০১৫ সালে মাস্কের জন্মদিন উপলক্ষে একটি লেখা লিখেছিলাম। তখন সেই লেখায় পিকেটির বিষয়ে কিছু লিখেছিলাম। এই বইটি বাছাই করায় আমি অনেক খুশি। আমাদের দেশে হয়তো বেশি বিক্রি হবে না। তবে পিকেটি যখন প্রকাশ করে তখন অনেক বেশি বিক্রি হয়েছিলো। এটি যখন প্রথম প্রকাশ পায় তখন বামপন্থী ও ডানপন্থী উভয়ে প্রশংসা করেছেন। একইসাথে তারা কিছুটা সমালোচনাও করেছেন। এবার বাংলা ভাষায় বইটির অনুবাদ অনেক ঝরঝরা হয়েছে।

আবিদ নাহার খন্দকার বলেন, বর্তমান সময়ের বাংলাদেশের অর্থনীতিতে খুব দ্রুত গতিতে একের পর এক ঘটনা ঘটছে। সাধারণ মানুষ এর সঙ্গে ঘটনার সঙ্গে আরেকটি ঘটনা মেলাতে পারছেন না। এই বইতে পুঁজিবাদের নানা দিক পিকেটের এই বইতে তুলে ধরা হয়েছে। সুতরাং বইটি পড়ে বিভিন্ন ঘটনার নানা দিক মানুষ সংযোগ করতে পারবে।

বর্তমান শতাব্দীর সবচেয়ে আলোচিত অর্থনীতিবিদ থমাস পিকেটির ‘ক্যাপিটাল ইন দ্য টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি’ বইটি ‘একুশ শতকে পুঁজি’ শিরোনামে বাংলা ভাষায় প্রকাশ হয়েছে। বিশ্বের প্রধান প্রধান ভাষায় বইটি অনূদিত হলেও এতদিন বাংলা ভাষায় এর পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ ছিল না।

অর্থসূচক/এমএইচ/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.