র‌্যাব সদস্যদের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে না ঘাবড়ানোর পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর

র‌্যাব সদস্যদের মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে না ঘাবড়ানোর পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে (নিষেধাজ্ঞা) আমি বলবো, কারো মনোকষ্ট হওয়া উচিত নয়। আমরা জানি কিছু দিন আগে একটি দেশ যেহেতু র‌্যাবের ওপর একটি স্যাংশন দিয়েছিল বলে অনেকেই প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিল। আমি বলেছিলাম, এখানে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এটা আমাদের দেশ, আমরা রক্ত দিয়ে এর স্বাধীনতা এনেছি। কাজেই আমার দেশে যারা কাজ করে তারা কে কী করে-না করে সেটা আমরা জানি। বিচারটা আমরা করব, সেই আত্মবিশ্বাস রেখেই কাজ করতে হবে।

রোববার রাজধানীর কুর্মিটোলায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদর দফতরে র‌্যাবের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রথমে বোধ হয় সবার একটু মনটা খারাপ ছিল। এখন সেই চিন্তা আর নেই। আমি এটা বলতে পারি যারা এই ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে বাংলাদেশের বদনাম করে, বাংলাদেশের একেকটা প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তাদেরকে আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। তারা কোন উদ্দেশ্যে করছে সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। ভালো মন্দের বিচার বাংলাদেশ সরকার করতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু আমি সরকারে আছি, আমি একটা কথা বলতে পারি, কে ভালো করল, কে মন্দ করল সেটার বিচার তো আমরাই করতে পারি, করে যাচ্ছি। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ করে না কিন্তু বাংলাদেশ করে। যেকোন অপরাধের কিন্তু বিচার হয়। কেউ যদি কোনো অপরাধ করে অবশ্যই সেটা আমরা নিজেরাই বলবো। পরের কথা শুনে কেউ মন খারাপ করবেন না। নিজের আত্মমর্যাদা বোধ নিয়ে চলতে হবে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে। সেটাই সবচেয়ে বড় কথা।

বিরোধী কিছু শক্তি বিদেশে দেশের বদনাম করছে, উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা জানি যে, দেশবিরোধী কিছু শক্তি আছে যারা বাংলাদেশ যত ভালো কাজই করুক না কেন তারা কিছুই চোখে দেখে না। আর আরেকটা শ্রেণি আছে, তাদের অভ্যাসটাই হলো বিদেশিদের কাছে যেয়ে বাংলাদেশের বদনাম করা। এ ধরণের বদনাম করে বদনামকারিরা আর্থিক বা অন্যান্য সুবিধাও পেতে পারে মর্মে নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোনো উন্নতি তাদের চোখেই পড়ে না।

সরকার প্রধান বলেন, র‌্যাবকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে র‌্যাব সদস্যরা আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। জঙ্গি দমনে র‌্যাব বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালিন বাংলাদেশ জঙ্গিবাদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছিল। মানুষ খুন, আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যার পর গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখা আমরা দেখেছি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর জঙ্গিবাদকে জিরো টলারেন্স হিসেবে ঘোষণা করে। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জঙ্গিবাদ কখনও কোনো দেশের উন্নতি করতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের যাত্রা শুরু করবো। এখন থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। সেই প্রস্তুতি নেয়ার জন্যই দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা দরকার। দেশের উন্নয়ন দরকার এবং সেক্ষেত্রে শান্তি, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা বাজায় রাখতে হবে। রমজান মাসের আগে কেউ যেন খাদ্য মজুদ এবং খাদ্যে ভেজাল দিতে না পারে এবং সমাজ থেকে মাদকের অপব্যবহার, কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি এবং সাইবার অপরাধ নির্মূলে আরও মনোযোগী হতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি বিশেষ করে র‌্যাবকে সজাগ থাকতে নির্দেশ দেন।

বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান সুন্দরবনে সন্ত্রাসবাদ জঙ্গিবাদ এবং জলদস্যুতা মোকাবেলায় র‌্যাবের তৎপরতার ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি আশা প্রকাশ করেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে যথাযথ দায়িত্বশীলতা, কার্যকারিতা এবং সক্রিয়তার সাথে এই বাহিনী অতীতের মতো ভূমিকা পালন করবে।

তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা ক্ষমতায় থাকাকালিন অগ্নি সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন অপতৎপরতা মোকাবিলা করেও তাঁর সরকার দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পেরেছে বলেই আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। কাজেই সেকথা মাথায় রেখেই সবাইকে চলার পরামর্শ দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এদেশের প্রতিটি শান্তিপ্রিয় নাগরিকের কাছে আজকে এলিট ফোর্স র‌্যাব নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছে। ‘বাংলাদেশ আমার অহংকার’ এই মূল মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দিপ্ত হয়ে জনগণ ও সম্পদের নিরাপত্তা দিতে ভবিষ্যতেও এই বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্বশীল, কার্যকর ও সক্রিয় ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তাঁর সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিল, সে ঘোষণা বাস্তবায়ন করেছে উল্লেখ করে বলেন, ২০৪১ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে তারই ভিত্তিতে তাঁর সরকার প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে এবং পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা স্মার্ট জনগোষ্ঠী গড়ে তুলবো, স্মার্ট অর্থনীতি হবে স্মার্ট বাংলাদেশে। সেই স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ বাস্তবায়ন করাটাই আমাদের লক্ষ্য। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ কিভাবে গড়ে উঠবে সেজন্য ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ তাঁর সরকার দিয়ে যাচ্ছে। সবথেকে বড় কথা এটা বাস্তবায়ন করতে হলে শান্তি-শৃঙ্খলা একান্তভাবে দরকার। কিছু লোক থাকবেই সবসময় বিরোধিতা করতে। আর মাঝে মাঝে কিছু উল্টা-পাল্টা কথাও বলবে। এগুলো কানে না নিয়ে নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে, আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে আমরা আমাদের দেশের কল্যাণে সঠিক কাজ করছি কি না সঠিক পথে আছি কি না, এই চিন্তাটা নিজেই করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে যদি আমরা এগিয়ে য্ইা অবশ্যই বাংলাদেশের এই অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাওয়া কেউ বন্ধ করতে পারবে না। আমরা বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবেই গড়ে তুলবো। আমাদের প্রত্যেক নাগরিককে মনে রাখতে হবে, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি, আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি এবং নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষণানুযায়ী ‘রুপকল্প-২০২১’ আমরা বাস্তবায়ন করতে সমর্থ হয়েছি।

তিনি বলেন, মাদক, অগ্নিসন্ত্রাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জঙ্গিবাদ দমনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে র‌্যাবের বলিষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে। পাহাড়েও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে র‌্যাব দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক ধরতে সক্ষম হয়েছে। সুন্দরবনের জলদস্যু পরিবারগুলোকে পুণর্বাসনে সুন্দরবনের হাসি নামক একটি পুণর্বাসন কর্মসূচি র‌্যাবের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধেও আমাদের যথাযথ সতর্ক থাকতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে। র‌্যাবসহ আমাদের সকল গোয়েন্দা সংস্থাকে যথাযথ ভূমিকা নিতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি মানুষের কল্যাণের জন্য, অকল্যাণের জন্য নয়। এই কথাটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। আমাদের আরেকটা বোঝা হচ্ছে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা। প্রতিনিয়ত সেখানে নানা ধরনের অপরাধ ঘটছে। এ ব্যাপারেও সকলের আরও নজর দিতে হবে যেন কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে না পারে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বের অনেক দেশই হিমশিম খাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখনো সে পর্যায়ে যায়নি, যাবেও না। তবে, দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় এনে তিনি সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর এবং কৃচ্ছতা সাধনে আহবান পুণর্ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.