মার্কিন ড্রোন ধ্বংস করলো রাশিয়ার যুদ্ধবিমান, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

কৃষ্ণসাগরের উপর আমেরিকার একটি ড্রোন ধ্বংস করেছে রাশিয়ার যুদ্ধবিমান। ওয়াশিংটন দাবি করেছে, রাশিয়ার একটি যুদ্ধবিমানের সঙ্গে সংঘর্ষে ড্রোনটি বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে রাশিয়া বলেছে, কোনো সংঘর্ষে নয় বরং দ্রুত বাঁক নিতে গিয়ে মার্কিন ড্রোনটি সাগরে ভেঙে পড়েছে।

রাশিয়া জানায়, ড্রোনটি কৃষ্ণসাগর থেকে আচমকা মুখ ঘুরিয়ে রাশিয়ার আকাশসীমার মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করছিল। তখনই রাশিয়া যুদ্ধবিমান নিয়ে ড্রোনটির পাশে যায়। ড্রোনটিকে সরানোর চেষ্টা করে এবং শেষ পর্যন্ত ড্রোনটির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। রাশিয়ার অভিযোগ, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আমেরিকার এই কাজ উস্কানিমূলক।

আমেরিকা অবশ্য রাশিয়ার অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, তাদের ড্রোনটি আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় রুটিন পরিক্রমা করছিল। আচমকাই রাশিয়ার দুইটি যুদ্ধবিমান তার পাশে আসে এবং ড্রোনটিকে ধ্বংস করা হয়। ড্রোন ধ্বংসের আগে তার উপর বিপুল পরিমাণ তেল ঢালা হয় বলে অভিযোগ। আমেরিকার দাবি, মাঝ আকাশে এভাবে তেল ঢেলে পরিবেশরও বিপুল ক্ষতি করেছে রাশিয়া। উস্কানি বা প্ররোচনার কোনো জায়গাই নেই, রুটিন টহল দিচ্ছিল ড্রোনটি।

রাশিয়ার পাল্টা প্রশ্ন, রুটিন টহল হলে ড্রোনের ট্রান্সপনডার বন্ধ করা ছিল কেন? ট্রান্সপনডার বন্ধ থাকলে তা ট্র্যাক করা যায় না। যোগাযোগও করা সম্ভব হয় না।

মার্কিন সামরিক বাহিনী বলেছে, মঙ্গলবার কৃষ্ণসাগরের উপর দিয়ে রাশিয়ার দুটি এসইউ-২৭ যুদ্ধবিমান এবং একটি মার্কিন রিপার ড্রোন উড়ছিল। এ সময় একটি যুদ্ধবিমান ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ ড্রোনটির সামনে যায় এবং সেটির ওপর কয়েকবার জ্বালানি তেল ফেলে। এরপর যুদ্ধবিমানটি ড্রোনটির ‘প্রোপেলারে’ আঘাত করে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত ড্রোনটি কৃষ্ণসাগরে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়। রুশ যুদ্ধবিমানের এই কর্মকাণ্ড ছিল ‘বেপরোয়া ও অপেশাদার’।

মার্কিন বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা জেনারেল জেমস বি হেকার এক বিবৃতিতে দাবি করেন, আমাদের এমকিউ-৯ বিমানটি আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় নিয়মিত অভিযানে ছিল। তখন সেটিকে আঘাত করে রাশিয়ার একটি যুদ্ধবিমান। এর ফলে ড্রোনটি বিধ্বস্ত হয়। এটি ছিল রাশিয়ার একটি অনিরাপদ ও অপেশাদার পদক্ষেপ, যার ফলে দুটি উড়োজাহাজ প্রায় বিধ্বস্ত হতে যাচ্ছিল।

মার্কিন বাহিনী এ দাবি করলেও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে ভিন্ন কথা। তারা বলেছে, এ ঘটনায় রুশ যুদ্ধবিমান কোনো অস্ত্র ব্যবহার করেনি বা ড্রোনটির সংস্পর্শে আসেনি। মঙ্গলবার সকালে রাশিয়ার অ্যারোস্পেস ফোর্সেসের নিয়ন্ত্রণকক্ষ ক্রিমিয়া উপদ্বীপের কাছে কৃষ্ণসাগরের আকাশে একটি মার্কিন এমকিউ-৯ ড্রোন শনাক্ত করে। সেটি রুশ ফেডারেশনের সীমান্তেরু এগোচ্ছিল। ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের জন্য যে অস্থায়ী আকাশপথ তৈরি করা হয়েছে, সেটি তা লংঘন করছিল। তখন অনুপ্রবেশকারী ড্রোনটিকে চিহ্নিত করার জন্য জঙ্গিবিমান পাঠানো হয়। কিন্তু দ্রুত বাক বদল করতে গিয়ে এমকিউ-৯ ড্রোনটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং সাগরে গিয়ে পড়ে।

এমকিউ-৯ রিপার নামের ওই ড্রোনটি নজরদারির কাজে ব্যবহার করে মার্কিন বিমান বাহিনী। মধ্য ইউরোপীয় সময় অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৩৩ মিনিটে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে মার্কিন বিমান বাহিনী।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতে আমেরিকা-রাশিয়ার এই সরাসরি সংঘাত পরিস্থিতি আরো জটিল করতে পারে। বস্তুত, ঘটনার পর রুশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করে আমেরিকা। সূত্র: ডিডাব্লিউ, পার্সটুডে, রয়টার্স, বিবিসি

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.