সড়ক দুর্ঘটনায় অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে ঢাকা উত্তর সিটি

সড়ক দুর্ঘটনার ফলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তাই উত্তর সিটি সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী মো. শরিফ উদ্দিন

সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন সম্মেলন কক্ষে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ এবং ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস এর সহায়তায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট যৌথভাবে একটি কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালায় রোডসাইড অবজারভেশনাল স্টাডি-এর ফলাফল সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের কাছে তুলে ধরা হয়। এসময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এই কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেল, মেকানিক্যাল সার্কেল ও সিভিল সার্কেল নামে তিনটি সার্কেল গঠন করে সড়ক নিরাপত্তা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম পরিকল্পনা করার সময় রোডসাইড অবজারভেশনাল স্টাডির ফলাফল ব্যবহার করার জন্য কর্মশালার সকল অংশগ্রহণকারীদের অনুরোধ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে নানাবিধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সহ (লিফট, এক্সেলেটর ইত্যাদি) ৩৬ টি নতুন ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ, পথচারীদের অনিরাপদ রাস্তা পারাপার বন্ধ করতে সড়কে বেড়া স্থাপন, বিমানবন্দর সংযোগ সড়কের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সড়ক উন্নয়ন কাজ, সড়ক বাতি স্থাপন, ফুটপাত তৈরী, ড্রেন তৈরী, আরসিসি পাইপলাইন নির্মাণ এবং রোড সাইন ও মার্কিং পুরাতন ফুট ওভারব্রিজ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করছে উত্তর সিটি কর্পোরেশন।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেইফটি ২০১৮- এর তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় (রোড ক্রাশ) প্রায় ১৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এছাড়া ২০ থেকে ৫০ লাখ মানুষ বিভিন্ন মাত্রায় আহত হয় বা পঙ্গুত্বের শিকার হয়। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ২৪ হাজার ৯৫৪ জন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ পুলিশ বলছে, ২০২২ সালে দেশে ৫ হাজার ২০০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ৬৩৮ জন নিহত হয়েছে।

নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সড়ক দুর্ঘটনাকে (রোড ক্রাশ) সহনীয় মাত্রায় রাখতে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও শহরে কাজ করে যাচ্ছে। ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেইফটি ২০২০-২০২৫ (বিআইজিআরএস) এর অংশ হিসেবে জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট তাদের স্থানীয় অংশীদার (সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ) এর সাথে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে সড়ক নিরাপত্তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের জন্য পর্যায়ক্রমে রোডসাইড অবজারভেশনাল স্টাডি পরিচালনা করছে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন তাদের অধীনে অবস্থিত এলাকাগুলোতে বিআইজিআরএস প্রকল্প পরিচালনার জন্য আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর করে, যার অংশ হিসেবে ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ইতিমধ্যে ৩ পর্বের তথ্য সংগ্রহ সম্পন্ন হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে ইঞ্জিনিয়ার তাবাসসুম আবদুল্লাহ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ সেলিম রেজা (অতিরিক্ত সচিব) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ডিএনসিসি

কর্মশালায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন সহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশের বিআইজিআরএস অংশীদার সংস্থার প্রতিনিধিরা (জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস, জিএইচএআই, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ডব্লিউ আর আই), একাডেমিক প্রতিষ্ঠান এবং সুশীল সমাজের বিভিন্ন সংস্থাসগুলো অংশগ্রহণ করে।

জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট থেকে ডাঃ শিরিন ওয়াধানিয়া এবং সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ থেকে ডাঃ সেলিম মাহমুদ চৌধুরী গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, গবেষণার সময়কালে মোট ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮৭২ টি পর্যবেক্ষণ করা হয়। সামগ্রিকভাবে হেলমেট ব্যবহারের হার (৯২ শতাংশ) ছিল সন্তোষজনক। তবে যাত্রীদের মধ্যে সঠিকভাবে হেলমেট ব্যবহারের হার ছিল মাত্র ৪৭ শতাংশ, যেখানে মহিলা এবং শিশুদের মধ্যে হেলমেট ব্যবহারের প্রবণতা ছিল খুবই কম। চালকদের মধ্যে সিট বেল্ট ব্যবহারের হার ছিল প্রায় ৬০ শতাংশ। তবে গাড়িতে যাতায়াতকারী শিশুদের কাউকেই নিরাপদ শিশু সুরক্ষিত আসন ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ১০ শতাংশ যানবাহনের গতি পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং স্থানীয় রাস্তায় চলাচল করা যানবাহনের প্রায় অর্ধেক যানবাহনকে প্রস্তাবিত গতির (৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টা) বেশি গতিতে চলতে দেখা যায়।

সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নেওয়া উদ্যোগ ও চলমান কার্যক্রমের সাফল্য কামনা করে সংশ্লিষ্ট সকলকে দক্ষতা ও সততার সাথে কাজ করার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনা করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান।

অর্থসূচক/এমএইচ/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.