শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের পর আজ (১২ মার্চ) ও সোমবার (১৩ মার্চ) ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন। মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) থেকে ফের শুরু হবে ক্লাস-পরীক্ষা।
শনিবার (১১ মার্চ) এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে অনিবার্য কারণ দেখিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর আগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অন্তত ২৫-৩০টি দোকানে অগ্নিসংযোগ করেন। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বগুড়া থেকে ‘মোহাম্মদ’ নামের একটি বাসে রাজশাহী যাচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী। বাসের সিটে বসাকে কেন্দ্র করে চালক শরিফুল ও তার সহযোগী রিপনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় ওই শিক্ষার্থীর। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিনোদপুর বাজারে বাস থেকে নামার সময় তাদের আবারও কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় বিনোদপুর বাজারের একজন ব্যবসায়ী বাসচালকের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। তখন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাতাহাতি হয় তার।
খবর পেয়ে সেখানে যান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া। এ সময় ব্যবসায়ীরা তার মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। ধাওয়া দিয়ে তাকে ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এতেই বড় হয়ে যায় ঘটনাটি। খবর পেয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবাসিক হল থেকে বের হয়ে বিনোদপুর গেটের পাশে অবস্থান নেন। আর ব্যবসায়ীরা অবস্থান নেন রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে বিনোদপুর বাজারে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। এতে আহত হন অনেক শিক্ষার্থী। ব্যবসায়ীদের মধ্যেও আহত হন অন্তত ১০ জন। এদিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ।
তবে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন রাবির কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে তিনজনের চোখে ও তিনজনের পুরো শরীরে গুলির ক্ষত চিহ্ন আছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে রামেক হাসপাতাল পুলিশ বক্সের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুকুল হোসেন বলেন, আহতদের মধ্যে রাবি শিক্ষার্থী রাকিব আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, রাবিতে সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ৮৪ জন ভর্তি আছেন। তাদের অধিকাংশ রাবি শিক্ষার্থী। এর পাশাপাশি পুলিশ ও অন্য সাধারণ জনগণও আছে। তাদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে। রাবির সাত শিক্ষার্থীর অবস্থা কিছুটা গুরুতর। তাদের শরীরে বুলেটের চিহ্ন আছে। বিশেষ করে তিন শিক্ষার্থীর চোখে বুলেট লেগেছে। এক শিক্ষার্থীর মাথায় বুলেট লেগেছে তাকে আইসিইউতে ভর্তি রাখা হয়েছে। অন্যদের স্বাভাবিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে সকালে চিকিৎসক এসে কারও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন কী না সেটি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
পুলিশ আইন লঙ্ঘন করে ছাত্রদের ওপর গুলি বর্ষণ করেছে দাবি করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক তারেক নূর বলেছেন, শিক্ষার্থীদের ওপর কোনোভাবে গুলি চালাত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। পুলিশ কোনো ধরনের অনুমতি না নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছুড়েছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রবিধান লঙ্ঘন করেছে। এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার। আমাদের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত। আমরা এখানকার (রামেক) চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, এখানেই তাদের চিকিৎসা হবে। যদি উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হয় আমরা তাদের ঢাকায় নিয়ে যেতে প্রস্তুত আছি। এখন ছাত্রদের চিকিৎসা দেওয়াটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
তবে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, ছাত্রদের ওপর কোনো ধরনের গুলি ছোড়া হয়নি। উভয়পক্ষকে শান্ত করতে কেবল টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। তাই কোনো মামলা রেকর্ড হয়নি।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে রাতে সাত প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনোদপুর ফটক এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন বিজিবির সদস্যরা। রাত ১২টা পর্যন্ত বিনোদপুর বাজার ও ক্যাম্পাস এলাকায় বিজিবিকে টহল দিতে দেখা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে বিজিবি মোতায়েন করতে বলেছি। তারই আলোকে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এরই মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। সংঘর্ষে আমাদের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদের চিকিৎসা দরকার। আপাতত আমরা এটি ফোকাস করছি। পরবর্তীতে আমরা বিষয়টি সমাধান করবো। সংঘর্ষের কারণে রবিবার ও সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
অর্থসূচক/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.