বাল্টিক সাগরে পাইপলাইনে কে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল?

গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে সমন্বিত বিস্ফোরণে দুটি গ্যাস পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ অ্যামেরিকা ও জার্মানির সংবাদ সূত্র অনুযায়ী সম্ভবত ইউক্রেনপন্থি কোনো গোষ্ঠী সেই অভিযান চালিয়েছিল৷

ইউক্রেনের উপর হামলার দায়ে রাশিয়ার উপর গত এক বছর ধরে নানা নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে৷ সেইসঙ্গে চাপের মুখে পশ্চিমা বিশ্ব সে দেশ থেকে জ্বালানি আমদানি প্রায় বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে৷ বিশেষ করে প্রাকৃতিক গ্যাস কেনার বিষয়টি সবচেয়ে কঠিন ছিল৷ ‘নর্ড স্ট্রিম ১’ নামের এক পাইপলাইন রাশিয়া থেকে সরাসরি জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ করে এসেছে৷ ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ প্রস্তুত হয়ে গেলেও যুদ্ধের কারণে সেটি আর চালু করা হয়নি৷ ২০২২ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর রহস্যজনকভাবে বাল্টিক সাগরের নীচে বিস্ফোরণের কারণে দুটি পাইপলাইনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ সেই ঘটনার তদন্তে এবার অগ্রগতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে৷

রাশিয়া বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন অন্তর্ঘাতের জন্য দায়ী বলে এতকাল বিভিন্ন মহলে জল্পনাকল্পনা চলছিল৷ এবার মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট উদ্ধৃত করে নিউ ইয়র্ক টাইমস দাবি করছে, যে সম্ভবত এক ইউক্রেনপন্থি গোষ্ঠী দুই পাইপলাইনের উপর সমন্বিত হামলা চালিয়েছে৷ তবে ইউক্রেনের সরকার সেই ঘটনায় জড়িত, এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ এর আগে ঘটনাস্থলের কাছের দুই দেশ সুইডেন ও ডেনমার্ক তদন্ত চালিয়ে ইচ্ছাকৃত বিস্ফোরণ সম্পর্কে নিশ্চিত হলেও দুষ্কৃতিদের পরিচয় জানতে পারেনি৷

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির রাজনৈতিক উপদেষ্টা মিখাইলো পদোলইয়াক বলেন, ইউক্রেন নিঃসন্দেহে পাইপলাইন বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত নয়৷ তাঁর মতে, এমন পদক্ষেপের কোনো অর্থই হতে পারে না৷ উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো ঘটনাটিকে ‘অন্তর্ঘাত’ হিসেবে বর্ণনা করেছে৷ রাশিয়া পশ্চিমা বিশ্বকে বিস্ফোরণের জন্য দায়ী করে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করেছে৷ কোনো পক্ষই প্রমাণ তুলে ধরেনি৷

নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী দুষ্কৃতিদের এক দল একটি ছোট নৌকা করে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিশেষজ্ঞ ডুবুরি নামিয়ে বিস্ফোরণের প্রস্তুতি নিয়েছিল৷ সেই দলে বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞও ছিলেন৷ তারা সম্ভবত ইউক্রেনীয় ও রুশ নাগরিক৷ ব্রিটিশ বা মার্কিন কোনো নাগরিক উপস্থিত ছিলেন না৷ তবে কে বা কারা সেই অভিযান আয়োজন ও তার অর্থায়ন করেছিল, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷

জার্মান তদন্তকারীদের ধারণা, অর্থের বিনিময়ে মোট পাঁচ পুরুষ ও এক নারী সরাসরি সেই অভিযানে অংশ নিয়েছিল৷ তাদের সবার কাছে পেশাদারি কৌশলে জাল করা পাসপোর্ট ছিল৷ জার্মানির তিনটি সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত উদ্যোগে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী তারা জাল পরিচয় দেখিয়ে পোল্যান্ডের এক কোম্পানির কাছ থেকে একটি নৌকো ভাড়া করে৷ জার্মানির উত্তরে রস্টক শহর থেকে তারা রওয়ানা হয়ে ডেনমার্কের ক্রিস্টিয়ানসো দ্বীপে চলে যায়৷ পরিষ্কার না করেই নৌকাটি আবার ফেরত দেওয়া হয়৷ ফলে তদন্তকারীরা সহজেই কেবিনের টেবিলে বিস্ফোরকের চিহ্ন পেয়েছেন৷

মার্কিন ও জার্মান তদন্তে কিছু ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও এখনো কোনো স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, এমনও হতে পারে যে দুষ্কৃতিরা তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করতে ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু চিহ্ন রেখে দিয়েছিল৷ অর্থাৎ অন্তর্ঘাতের জন্য ইউক্রেনের সরকার বা নিরাপত্তা বাহিনীকে দায়ী করার প্রচেষ্টার পাশাপাশি ইউক্রেন সত্যি সেই ঘটনায় জড়িত, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, রয়টার্স, এএফপি

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.