‘স্মার্ট ওমেন: স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক আইডিয়া ফাউন্ডেশনের সেমিনার

এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়নে এবং স্মার্ট আগামীর বাংলাদেশ গঠনে নারীদের ভূমিকা ও করনীয় প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে ‘স্মার্ট ওমেন: স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করে ‘ইনোভেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েটস (আইডিয়া) ফাউন্ডেশন’।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, এম.পি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, এম.পি।

স্বাগত বক্তব্য ও মুক্ত আলোচনা সঞ্চালনা করেন আইডিয়া ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান এবং প্রাক্তন মুখ্য সচিব ও মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) মো: আবুল কালাম আজাদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সিনিয়র সচিব নাসিমা বেগম। আলোচক ছিলেন আইডিয়া ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারী ও সাবেক সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক; ওরাকল বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান’র কান্ট্রি ম্যানেজিং ডিরেক্টর রুবাবা দৌলা; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওমেন্স অ্যান্ড জেন্ডার ষ্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক; এবং বাংলাদেশ হাইওয়ে পুলিশ’র অ্যাডিশনাল ডিআইজি ফরিদা ইয়াসমিন। সেমিনারের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন আইডিয়া ফাউন্ডেশনের সিনিয়র সাইকোলজিস্ট, কনসালটেন্ট খন্দকার সাখাওয়াত আলী প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন আইডিয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং সাবেক সচিব, বিশ্বব্যাংকের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)’র সাবেক চেয়ারম্যান কাজী এম. আমিনুল ইসলাম।

স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল রূপান্তর। যার জন্য প্রয়োজন স্মার্ট নাগরিক, সরকার, অর্থনীতি, সমাজ, চিকিৎসা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান, কৃষি, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা ইত্যাদি। নারীবান্ধব ডিজিটাল অর্থনীতি। সর্বাধুনিক বৈশ্বিক প্রযুক্তি, আদর্শ ও উন্নয়নের বিষয়ে জ্ঞান ও তথ্য।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় নাসিমা বেগম বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জরিপ ২০২২ অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ৫০.৪% নারী। গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২২ অনুযায়ী, ১৪৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭১ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় অষ্টমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। মহিলা উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংকের মোট এসএমই তহবিলের ১৫% রিজার্ভ। নারীদের এগিয়ে যাওযার জন্য যে সকল বাধা রয়েছে তার উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সামাজিক অবস্থান, সাইবার নিরাপত্তার অভাব, অনলাইন হয়রানির হুমকি, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি এবং নারী ও শিশু পাচারও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রযুক্তিতে নারীদের গ্রহণযোগ্যতা খুবই কম। সফ্টওয়্যার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং উন্নত প্রযুক্তিতে মাত্র ১-৮% মহিলা। সকল বাধা দূর করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য করনীয় হতে পারে যেমন, নারীর ক্ষমতায়নের জন্য সকল অংশীদারদের মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতা উন্নত করুন। একটি বাস্তুতন্ত্র গড়ে তুলুন যেখানে নারীরা অনুপ্রাণিত হয়, উৎসাহিত হয় এবং প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য এবং উদ্যোক্তাকে গ্রহণ করার জন্য পুরস্কৃত হয়।

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, “স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে বিশেষ নজর দিতে হবে, এবং সেক্ষেত্রে কাউকে অবহেলা করলে চলবে না। নারীকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করতে পারলে স্মার্ট সমাজ তথা স্মার্ট দেশ গঠন সম্ভব। শিক্ষা, পেশা, প্রযুক্তি সকল ক্ষেত্রেই সমতা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে ১২ হাজার নারী স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছে। তাই নারীদের কোন ক্ষেত্রেই দুর্বল মনে করার সুযোগ নেই। এন্ট্রাপ্রিনিউরশিপ, ফ্রি-ল্যান্সিং, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিটি এসব ক্ষেত্রেও নারীদের ক্ষেত্রগুলো প্রশস্থ করতে হবে।”

মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, “স্মার্টনেস মানে আত্মবিশ্বাস। আর ধর্ম, বর্ণ, জাত, প্রতিবন্ধকতা কোন ক্ষেত্রেই এর ব্যতিক্রম নয়। নারীদের দুর্বল মনে করা এই সমাজের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে স্মার্ট চিন্তাধারা ও মানসিকতা আবশ্যক। নারীদের যথাযথ সুযোগ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার সাধ্যমত এই প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে, তবে সকলকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। গ্রামের নারী–শহরের নারী এজাতীয় বৈষম্য বা বিভাজনও দূর করতে হবে। তবেই বাড়বে আত্মবিশ্বাস, ঘটবে উন্নয়ন।”

মো: আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আজকের আলোচ্য বিষয়গুলো শুধুমাত্র কাগজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। স্মার্ট ওমেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে নিজ নিজ মতামত আইডিয়া ফাউন্ডেশনের ইমেইলে শেয়ার করার জন্য সকলকে আমি আহ্বান জানাচ্ছি। আর এজন্য একটি বিশেষ নেটওয়ার্ক তৈরি করা হবে, যার মাধ্যমে সকলের যুক্ত থাকতে পারবেন।”

কাজী এম. আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমাদের এই পদক্ষেপ গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য, আমরা উপলব্ধি করেছি যে, দেশকে উন্নত করতে হলে নারীদের উন্নত করতে হবে, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে নারীদের স্মার্ট করে তুলতে হবে। নারীকে তুচ্ছ করে যারা বড় হতে চেয়েছে, তারা বরাবরই পতনের দিকে এগিয়ে গেছে। আইডিয়া ফাউন্ডেশনের কর্মসূচী আগামীতেও অব্যাহত থাকবে এবং নারীদের সমতা নিশ্চিতে কাজ করে যাবো।”

মুক্ত আলোচনায় কর্মক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা ও অধিকার, দক্ষতা উন্নয়ন, প্রতিবন্ধী নারীদের সুযোগ প্রদান, শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করা, সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত, গ্রামীণ নারীদের সরকারের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণে উৎসাহ প্রদানের কৌশল নির্ধারণ ইত্যাদি বিষয়গুলো উঠে আসে।

উল্লেখ্য, ইনোভেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েটস (আইডিয়া) ফাউন্ডেশন’ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উপর ফোকাস সহ উন্নয়ন সহযোগীদের একটি সংস্থা, স্বাধীন গবেষণা, নীতি বিশ্লেষণ, অ্যাডভোকেসি, উপদেষ্টা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে নিযুক্ত।

 

অর্থসূচক / এইচএআই

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.