ফাইনালের ভাগ্য বরাবরই মাশরাফির

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) কোনও আসরেই সিলেটের কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি ফাইনালে ওঠেনি। এবার সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ফাইনালে তুলেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো ফাইনাল খেলছেন তিনি। যদিও ‘ম্যাজিক’ বা ‘জাদু’র তত্ত্বে বিশ্বাসী নন তিনি। সবকিছুকেই দেখছেন সৃষ্টিকর্তার রহমত হিসেবে।

ফাইনালের ভাগ্য বরাবরই ভালো মাশরাফির। বিপিএলের এর আগে খেলা চারটি ফাইনালেই শিরোপা জিতেছেন তিনি। কখনোই দেখেননি হারের মুখ। এর আগে ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের হয়ে দুবার, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এবং রংপুর রাইডার্সের হয়ে একটি করে শিরোপা জিতেছিলেন তিনি। সবগুলো শিরোপাই জিতেছেন অধিনায়ক হিসেবে।

অথচ ২০১২ বিপিএলের প্রথম আসরে দল পাওয়া নিয়েই ছিল শঙ্কা। সেবার নবাগত নাসির হোসেন নিয়ে রীতিমতো কাড়াকাড়ি হলেও মাশরাফি যেন ছিলেন আড়ালে। অথচ অন্তত ক্রিস গেইল-শহীদ আফ্রিদির মতো কাড়াকাড়ি হবার কথা ছিল মাশরাফিকে নিয়ে। শেষ পর্যন্ত দল ফেলেও দাম পেয়েছিলেন মোটে ৪৫ হাজার ডলার। এত অল্প দামে ঢাকা গ্লাডিয়েটর্স যেন সোনার হরিণ কিনে নিয়েছিলেন।

সেবার অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পেয়ে বিপিএলের প্রথম আসরেই বাজিমাত করেন মাশরাফি। ইমরান নাজির-আজহার মাহমুদ-ইলিয়াস সানিদের সঙ্গে পারফর্ম করেছিলেন তিনি। বল হাতে সেবার পেয়েছিলেন ১০ উইকেট। প্রথম আসরে ঢাকাকে চ্যাম্পিয়ন বানানোয় দ্বিতীয় মৌসুমেও গ্লাডিয়েটর্সের ভরসা ছিল অধিনায়ক মাশরাফির ওপর। ঢাকাকে সেবারও হতাশ করেননি নড়াইল এক্সপ্রেস। বল হাতে মাত্র ৮ উইকেট পেলেও নেতৃত্বগুণে চিটাগং কিংসকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জিতেছিল মাশরাফির ঢাকা। স্পট ফিক্সিং ও নানা ইস্যুতে পরেরবার মাঠে গড়ায়নি বিপিএল। এক মৌসুম বিরতি দিয়ে বিপিএল ফিরলে মাশরাফির ঠিকানা হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। সেখানেও ডানহাতি এই পেসারের নেতৃত্বের বাজিমাত। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে বরিশাল বুলসকে হারিয়ে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কুমিল্লা। আর হ্যাটট্রিক শিরোপা জেতেন অধিনায়ক মাশরাফি।

২০১৬ সালে ভালো করতে না পারায় পরের বছর বদলে যায় তার দল। শিরোপা খরা কাটাতে মাশরাফির কাঁধে নেতৃত্বভার তুলে দেয় রংপুর রাইডার্স। উত্তরাঞ্চলের দলটাকে হতাশ করেননি মাশরাফি। সাকিব আল হাসানের ঢাকা ডায়নামাইটসকে হারিয়ে তাদেরও প্রথম শিরোপা দেন বাংলাদেশের তৎকালীন অধিনায়ক। অর্থাৎ বিপিএলের প্রথম পাঁচ আসরে চার ফাইনাল খেলা মাশরাফি জিতেছেন সবকটিতেই।

বিপিএলের বাইরে মাশরাফি ঘরোয়া স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তিনটি দলের হয়ে। ২০১০ সালে জাতীয় লিগ টি-টোয়েন্টিতে সুলতানস অব সিলেট, ২০১৩ বিজয় দিবস টি-টোয়েন্টিতে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব এবং ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টিতে কাপে খেলেছেন জেমকন খুলনার হয়ে। সিলেট ও মোহামেডানের হয়ে ফাইনাল খেলা হয়নি মাশরাফির। তবে জেমকনের হয়ে ফাইনালে উঠেছিল তার দল। দলকে ফাইনালে তুলতে প্রথম কোয়ালিফায়ারে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন মাশরাফি। তিনি অধিনায়ক না হলেও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নেতৃত্ব শিরোপা জেতেন তারা। অর্থাৎ স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত পাঁচটি ফাইনাল খেলেছেন মাশরাফি। যার সবকটিতেই জয় পেয়েছেন নড়াইল এক্সপ্রেস। আরও একবার শিরোপার খুব কাছে দাঁড়িয়ে তিনি।

১৪ ফেব্রুয়ারি রংপুরকে হারিয়ে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে প্রথমবার ফাইনালে তুললেন মাশরাফি। তাতে ষষ্ঠবারের মতো ফাইনালে উঠলেন তিনি। যার মাঝে বিপিএলেই পাঁচবার। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের ফাইনালের পর মাশরাফি জানিয়েছিলেন, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতে নামলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাই। বিশেষ করে ফাইনাল খেললে জিতে যাই। স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা আবারও।’

বিপিএলে অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি পঞ্চম শিরোপার দেখা পান কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে পরিসংখ্যান বলছে ফাইনাল থেকে খালি হাতে ফেরেন না মাশরাফি। ১৬ ফেব্রুয়ারির ফাইনালে কুমিল্লা বিপক্ষে এটা হয়তো বড় টনিক হিসেবেই কাজ করবে সিলেটের সমর্থক আর ক্রিকেটারদের জন্য।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.