ব্যাংকিং খাতে চলছে নানা অস্থিরতা। বছরের শুরু থেকেই ছিলো ডলার সংকট। ধারাবাহিকভাবে কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এসবের মধ্যেও ব্যাংকিং চ্যানেলে বাড়ছে টাকা জমা, উত্তোলন ও খরচ। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) চেকের পাশাপাশি কার্ড, ইন্টারনেট, এজেন্ট ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনেদেনের পরিমাণ বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত ‘মাসিক অর্থনৈতিক গতিধারা’ থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে দেশের ব্যাংকগুলোর চেক নিষ্পত্তি হয়েছে ৮ লাখ ৫৩ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। এর আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিলো ৭ লাখ ৭৯ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চেক নিষ্পত্তি বেড়েছে ৭৪ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। মূলত এক ব্যাংকের চেক অন্য ব্যাংকে জমা দিলেই চেক নিষ্পত্তির প্রয়োজন হয়।
প্রতিবদেনে আরও দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে চেক নিষ্পত্তি ও ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে লেনদেন কমেছে। একই সময়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমেছে। এক মাসে চেক নিষ্পত্তি কমেছে ১৩ হাজার ৮২১ কোটি টাকা। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে লেনদেন কমেছে ৬৪০ কোটি টাকা। এছাড়া সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমেছে ৪৪০ কোটি টাকা।
এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক অর্থসূচককে বলেন, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরের দিকে লেনদেন কম থাকে। আবার জুন মাসের দিকে লেনদেনের পরিমাণ ঠিক হয়। আমাদের অর্থনীতিতে লেনদেন ঋতুত্ব রয়েছে। ব্যাংকিং খাতের যে অস্থিরতার কথা বলা হচ্ছে তার প্রভাব লেনদেনে পড়েনি। আমরা এরকম কোনো তথ্য খুঁজে পাইনি।
জানা যায়, গত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার হয়েছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬০২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ বেড়ে দাড়িয়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার বেড়েছে ২২ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা। ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে মুহূর্তেই যেকোনো ব্যাংকের হিসাবে টাকা পাঠানো যায়। এ জন্য কোনো চেকের প্রয়োজন হয় না।
আলোচ্য সময়ে টাকা লেনদেনের পাশাপাশি সব ধরনের কার্ডের ব্যবহারও বেড়েছে। এসময় ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয় ৯ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ের মধ্যে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়েছিলো ৬ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা। এছাড়া চলতি অর্থবছরে ডেবিট কার্ডেও লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। প্রথম চার মাসে আগের অর্থবছরের তুলনায় ডেবিট কার্ডে লেনদেন বেড়েছে ৫০ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর অর্থসূচককে বলেন, আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে এবং ডলারে যেটা এসেছে সেটার পরিমাণ আরও বড় হয়েছে। এছাড়া টাকার অংকে আমাদের ফ্লো অনেক বেড়েছে, ফলে এর প্রভাব পুরো অর্থনীতিতে পড়েছে। এদিকে বর্তমান সময়ে ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা রয়েছে। এর ফলে মানুষ টাকা এক যায়গা থেকে তুলে অন্য যায়গায় নিয়ে রাখছে। অর্থাৎ আরও বেশি নিরাপদ যায়গায় তারা অর্থ রাখার চেষ্টা করছে। এরফলে ব্যাংকে আমানতের সুদহার কমলেও অর্থনৈতিক কার্যক্রম আগের তুলনায় বেড়েছে। এসবের প্রভাবে ব্যাংকিং খাতে লেনদেনের পরিমাণ হয়তো কিছুটা বাড়ছে।
কার্ডের পাশাপাশি ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমেও ব্যাংকিং লেনদেন বেড়েছে। গত বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ে ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয় ৬০ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ বেড়ে দাড়িয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা।
এসময় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও লেনদেন বেড়েছে। চলতি বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ে এই মাধ্যমে লেনদেন হয় ৩ লাখ ৫৭ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা। এর আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিলো ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। সেই তুলনায় চলতি বছরে আলোচ্য সময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন বেড়েছে ৫৭ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা।
পাশাপাশি এজেন্ট ব্যাংকিং মাধ্যমেও লেনদেন বেড়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা। চলতি বছরের একই সময়ে লেনদেনের পরিমাণ ৭৪ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা বেড়ে মোট পরিমাণ দাড়ায় ২ লাখ ২৯ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা।
অর্থসূচক/সুলাইমান/এমএস



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.