জাতিসংঘের নারী সংক্রান্ত কমিটি থেকে বাদ ইরান

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক এবং সমাজ বিষয়ক কমিটি বুধবার জাতিসংঘে একটি ভোটাভুটির আয়োজন করে। সেখানে প্রশ্ন ছিল, ইরানকে ইউএনসিএসডাব্লিউ বা জাতিসংঘের নারী অধিকার সংক্রান্ত কমিটিতে রাখা হবে কি না! আমেরিকা এই ভোটের আহ্বান জানিয়েছিল। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো ২৯-৮ ভোটে প্রস্তাব সমর্থন করেছে। অর্থাৎ, ইরান আর ওই কমিটিতে থাকতে পারবে না।

মার্কিন প্রস্তাবের পক্ষে ২৯ ভোট পড়েছে। বিপক্ষে ভোট দিয়েছে আটটি দেশ এবং ভোটে অংশ নেয়নি ১৬টি দেশ। আমেরিকার বক্তব্য, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইরানে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন নারীরা। তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নিচ্ছে ইরানের প্রশাসন। আন্দোলনকারীদের উপর অত্যাচার চলছে, তাদের জেলে ভরা হচ্ছে এমনকী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের নারী অধিকার সংক্রান্ত কমিটিতে ইরানের থাকার কোনো যোগ্যতা নেই বলে জানিয়েছিল আমেরিকা।

রাশিয়া অবশ্য প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, জাতিসংঘের অর্থনৈতিক এবং সমাজ বিষয়ক কমিটি আদৌ এ ধরনের ভোটের আয়োজন করতে পারে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।

চার বছরের জন্য বিভিন্ন দেশ জাতিসংঘের ইউএনসিএসডাব্লিউ কমিটিতে যোগ দিতে পারেন। বর্তমান কমিটি ২০২২ সালে নির্বাচিত হয়েছিল। ২০২৬ সাল পর্যন্ত এই কমিটি থাকবে। ফলে ২০২৬ সাল পর্যন্ত ইরান আর এই কমিটির কোনো বৈঠকে যোগ দিতে পারবে না।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস গত নভেম্বর মাস থেকে ইউএনসিএসডাব্লিউ থেকে ইরানকে সরানোর দাবি জানাতে শুরু করেছিলেন। এদিনের ভোটের পর টুইট করে তিনি জানিয়েছেন, এটি ইরানের নারীদের জয়।

বস্তুত, আমেরিকা জানিয়েছে, এই ভোটের মধ্য দিয়েই ইরানের আন্দোলনকারী নারীদের পাশে দাঁড়াতে চায় আমেরিকা এবং জাতিসংঘ। এর আগেও ইরানকে এ বিষয়ে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিল আমেরিকা এবং জাতিসংঘ।

এদিকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা থেকে ইরানের সদস্যপদ বাতিলের ঘটনাকে বেআইনি বলে প্রত্যাখ্যান করেছে তেহরান। ইরান বলেছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ওই প্রস্তাব পাসের মাধ্যমে জাতিসংঘ ঘোষণা লঙ্ঘন করা হয়েছে।

এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানয়ানি বলেন, আমেরিকা সব রকম প্রচেষ্টা চালিয়েও প্রস্তাবটিকে সর্বসম্মতিক্রমে পাস করাতে পারেনি। এছাড়া, এটি জাতিসংঘ ঘোষণার পরিপন্থি এবং আমেরিকা এ পদক্ষেপের মাধ্যমে জাতিসংঘে একটি খারাপ নজির সৃষ্টি করল। আমেরিকা জাতিসংঘকে তার একতরফা রাজনৈতিক ইচ্ছেপূরণের হাতিয়ারে পরিণত করেছে।

ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার কঠোর নিষেধাজ্ঞা এবং ইরানে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে মার্কিন উস্কানির কথা উল্লেখ করে কানয়ানি বলেন, ইরানের জনগণ ও নারী অধিকারের সবচয়ে বড় লঙ্ঘনকারী ওয়াশিংটন। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে এখন পর্যন্ত ইরানি জনগণ ও তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে এমন কোনো কাজ নেই যা আমেরিকা করেনি। তাহলে আজ কোন মুখে মার্কিন সরকার ইরানি নারীদের অধিকারের পক্ষে কথা বলছে? সূত্র: ডিডাব্লিউ, রয়টার্স, এপি, এএফপি, পার্সটুডে

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.