‘সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানিতে বড় বাধা ডলার সংকট’

ডলার সংকটের কারণে সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানিতে বিঘ্ন হচ্ছে। খাতটির মালিকরা নতুন করে এলসি খুলতে গিয়েও বর্তমানে বিরাট বাধার সম্মুখীন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) সভাপতি ও ক্রাউন সিমেন্টের ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আলমগীর কবির।

মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সিমেন্ট শিল্পের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে রাজধানীর একটি হোটেলে বিসিএমএ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিসিএমএর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ, নির্বাহী সদস্য আমিরুল হক ও নির্বাহী পরিচালক শংকর কুমার রায়সহ বেশ কয়েকটি সিমেন্ট কোম্পানির প্রতিনিধিরা।

আলমগীর কবির বলেন, আড়াই দশক পূর্বে সিমেন্টের প্রায় সম্পূর্ণ চাহিদা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হতো। তবে গত আড়াই দশকে উদ্যোক্তাদের সাহসী পদক্ষেপ ও সরকারের নীতি সহায়তার কারণে সিমেন্ট শিল্প একটি বিকাশমান ও সুসংগঠিত খাত হিসেবে বিবেচিত হতো। দেশের চাহিদা মিটিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বিদেশেও সিমেন্ট রপ্তানি করে আসছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৩৫টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান সিমেন্ট উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক কার্যকরী উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৭৯ মিলিয়ন টন। যার বিপরীতে চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩৯ মিলিয়ন টন। চাহিদার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণের বেশি উৎপাদন ক্ষমতা থাকার কারণে বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা রয়েছে। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে নামমাত্র মূল্যে সিমেন্ট বিক্রি করতে হয়। এতে আর্থিকভাবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য প্রধান কাঁচামাল হলো ক্লিংকার, স্লাগ, লাইমস্টোন, ফ্লাই এ্যাশ এবং জিপসাম। এই পাঁচ প্রকার কাঁচামালই বিদেশ হতে আমদানি করতে হয়। বিএসটিআই এবং ইউরোপিয়ান নর্মস অনুযায়ী সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত লাইমস্টোন ব্যবহারযোগ্য। লাইমস্টোনের আমদানি মূল্য অন্যান্য কাঁচামালের আমদানি মূল্যের তুলনায় সবচেয়ে কম। সেভাবে লাইমস্টোন একটি সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ী কাঁচামাল, তাই এই অতিরিক্ত শুদ্ধায়নের ফলে সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা লাইমস্টোন আমদানি করতে নিরুৎসাহিত হবেন বলে ধারণা হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে, বর্তমান ডলার সংকটের উপর অতিরিক্ত চাপ বাড়বে, যা কোনভাবেই কাম্য না। এই অতিরিক্ত শুল্কায়ন এর ফলে বর্তমানে আমদানি মূল্যের উপর প্রায় ২৭ শতাংশের পরিবর্তে প্রায় ৬৭ শতাংশ শুল্ক ও কর পরিশোধ করে লাইমস্টোন ছাড় করাতে হচ্ছে।

বিসিএমএ প্রেসিডেন্ট বলেন, আমদানি পর্যায় ছাড়াও বিক্রয় পর্যায়েও ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ধার্য করা আছে। অর্থাৎ একটি সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লোকসান করলেও, তাকে চূড়ান্ত কর দায় হিসেবে এই অগ্রিম আয়কর পরিশোধ করতে হবে। যা কোন বিবেচনায় গ্রহণযোগ্য না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে সিমেন্ট শিল্পের জন্য অগ্রিম আয়করের কারণে দূরাবস্থার বিষয়টি আমরা সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা পূর্বে অনেকবার তুলে ধরেছি। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছে না। এর ফলে দেশের একটি উদীয়মান শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা আশা করছি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়টি বিবেচনায় নিবেন। একইসাথে অগ্রিম আয়কর আমদানি ও বিক্রয় উভয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ দশমিক ৫০ শতাংশ ধার্য করবেন। এছাড়া চূড়ান্ত কর দায় হতে মুক্ত করবেন।

তিনি আরও বলেন, দেশে বর্তমানে প্রায় ৩৫টি দেশি-বিদেশি কোম্পানি সিমেন্ট উৎপাদন করছে। খাতটিতে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। এই খাত থেকে বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি সরকারি কোষাগারে শুল্ক ও কর জমা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য প্রধান কাঁচামালগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল লাইমন্টোনের উপর আকস্মিক ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ৩ শতাংশ অগ্রিম আয়করের সাথে আরও ২ শতাংশ অতিরিক্ত অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি লাইমস্টোন আমদানিতে আগে থেকেই ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর ও ৩ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হয়। এদিকে লাইমস্টোনের উপর আকস্মিক সম্পূরক শুল্ক ধার্যের কারণে এ খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.