খুচরা বাজারে ডলারে দাম গুণতে হচ্ছে ১১০ টাকা ৬০ পয়সা

দেশে ডলার সংকটের চাপ সামাল দিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে এখন পর্যন্ত ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলার বিক্রি ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলারে।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) খুচরা পর্যায়ে ১১০ টাকা ২০ পয়সায় ডলার ক্রয় করা হচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা ৬০ পয়সায়। অন্যদিকে আন্তঃব্যাংকে ১০০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০৩ টাকা ৭৫ পয়সায় ডলার বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে আজ গ্রাহকের উপস্থিতি কম ছিলো। পল্টন ও মতিঝিল এলাকার বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ হাউজ ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

অন্যদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে ডলার কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয় খোলাবাজারে। এ মার্কেটের সিন্ডিকেটের হাতেই ছিলো ডলারের লাগামহীন দর। খোলাবাজারে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে মানি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোতে অভিযান পরিচালনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির এসব উদ্যোগে ধীরে ধীরে ডলার মজুতের কারসাজি হ্রাস পায়। এতে ডলারপ্রতি দাম ৮ থেকে ১০ টাকা কমে আসে।

এদিন শফিউল আলম নামের একজন ডলার বিক্রেতা অর্থসূচককে বলেন, খোলা বাজারে বর্তমানে ডলার খুব সহজেই পাওয়া যায়। দামও হাতের নাগালে রয়েছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে অনেক বেশি দাম দিয়ে ডরার কিনতে হতো। এখন দাম অনেক কমেছে।

ডলারে বেশি মুনাফা করার প্রমাণ পাওয়ায় গত ৮ আগস্ট দেশি-বিদেশি ৬টি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে অপসারণ করতে নির্দেশ দিয়েছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো- ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক এবং বিদেশি খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসে। ফলে এসব ব্যাংকগুলোর ট্রেজারি প্রধানরা কাজে ফেরার সুযোগ পেয়েছেন।

একই সময়ে ডলারের কারসাজি রোধে পাঁচ মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হয়েছে। একইসাথে ৪২টি প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে এবং ৯টি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করা হয়েছে। যারা এতোদিনে লাইসেন্স না নিয়েই ব্যবসা করে আসছিল।

বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশে ডলার সংকট চলছে। এর মধ্যে রেমিট্যান্সেও বড় ধাক্কা লেগেছে। অক্টোবরে রেমিট্যান্স এসেছে গত আট মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। সদ্য বিদায়ী মাসটিতে ১৫২ কোটি ৫৪ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এক মাসের ব্যবধানে রেমিট্যান্স কমেছে ১ কোটি ৪১ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিলো ১৫৩ কোটি ৯৫ লাখ ডলার।

এর আগে জুলাইয়ে রেমিট্যান্স আসে ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। এরপর আগস্ট মাসে আসে ২০৩ কো‌টি ৭৮ লাখ ডলার। তবে সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্সে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। সেপ্টেম্বরে ১৫৩ কোটি ৯৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠায় প্রবাসীরা।

রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রফতানি আয়েও পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। এতে ব্যাপক ডলার সংকটে ভুগতে হচ্ছে। ফলে প্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হয়। ইতিমধ্যে ডলার সংকটের প্রভাব পুরো অর্থনীতির উপর পড়তে শুরু করেছে। এসব সংকট কাটিয়ে উঠতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। শিগগিরই সংকট সমাধান হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অর্থসূচক/সুলাইমান/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.