এলসি খোলায় নিরুৎসাহিত করতে গভর্নরের নির্দেশ

অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসদ্রব্য আমদানিতে এলসি খোলার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করার জন্য ব্যাংকারদের নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

শনিবার (২৯ অক্টোবর) মিরপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমিতে ‘এন্টারপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম অ্যান্ড ওপেন লোন ডিসবার্সমেন্ট’ শীর্ষক একটি কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর এসব কথা বলেন।

গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, আয় বৈষম্য হ্রাস, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই এন্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্টের এসইআইপি প্রকল্পের শাখা-৩ এর আওতায় ‘উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রোগ্রাম’ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। দেশের তরুণ উদ্যমী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নেওয়ার প্রয়াসে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

এসইআইপি প্রোগ্রাম একটি প্রতীকী উদ্যোগ উল্লেখ করে তিনি ব্যাংকারদের বলেন, ব্যাংকগুলো তাদের সিএসআর তহবিল থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত এ ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। সেক্ষেত্রে সিএসআর নীতিমালায় কোনো ধরনের পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে তাও করা হবে।

এ ছাড়াও তিনি বিভিন্ন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের উদ্দেশ্যে বর্তমান বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে কিছু দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি এবং ওয়েজ আর্নারদের রেমিট্যান্স পাঠানোর ব্যয় কমানোর উদ্দেশ্যে দেশে অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ফি ব্যাংকগুলোকে বহনের আহবান জানান তিনি।

এর ফলে একদিকে যেমন রেমিট্যান্স যোদ্ধারা দেশে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত হবেন, অপরদিকে ব্যাংকগুলো তাদের কাঙ্খিত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম হবে।

প্রবাসীদের কষ্টার্জিত টাকা যেন কোনোভাবেই অবৈধ চ্যানেলে না যায় সে ব্যবস্থা গ্রহণের উপর জোর দেন গভর্নর। প্রয়োজনে মালদ্বীপসহ যেসব দেশ থেকে রেমিট্যান্স আহরণের সুযোগ রয়েছে সেসব দেশে ব্যাংক নির্বাহীদের এক্সচেঞ্জ হাউজ স্থাপনের উদ্যোগ নিতে বলেন।

এছাড়া অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসদ্রব্য আমদানিতে এলসি খোলার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করার জন্য ব্যাংকারদের নির্দেশনা দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। একইসঙ্গে গম, চিনি, ডাল, ভোজ্য তেলসহ আমদানি নির্ভর যেসকল খাদ্যসামগ্রী রয়েছে তা আমদানিতে যেন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের আহবান জানান গভর্নর।

এছাড়া ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই কনফারেন্সে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিপার্টমেন্টের স্কিলস ফর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইআইপি) প্রকল্পের নির্বাহী প্রকল্প পরিচালক মো. এখলাছুর রহমান। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন এসইআইপি প্রকল্পের কর্মকর্তাবৃন্দ, তফসিলি ব্যাংকসমূহের প্রধান নির্বাহীবৃন্দ, বিভিন্ন অংশীজন ও উদ্যোক্তাবৃন্দ।

এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মো. এখলাছুর রহমান বলেন, এসইআইপির আওতায় উদ্যোক্তা বা কর্মীদের এমনভাবে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যার ফলে প্রশিক্ষিত কর্মীগণ স্বাবলম্বী হতে উদ্বুদ্ধ হন।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এসইআইপি প্রকল্পের আওতায় উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সম্ভব। উচ্চ মূল্যমানের পণ্য উৎপাদনে এবং দক্ষ কর্মবল সৃষ্টিতে এ প্রোগ্রামের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নতুন ও সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তা, দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকার এবং সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই এন্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস্ ডিপার্টমেন্টের এসইআইপি প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন ইউনিটের উদ্যোগে প্রশিক্ষণার্থীদের শিক্ষণ উপকরণ হিসেবে প্রকাশিত ‘উদ্যোগ সফলতায় ১০০ ঘণ্টা’ র্শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয় এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মসূচির উপর নির্মিত একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।

কনফারেন্সে এসএমই এন্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস্ ডিপার্টমেন্টের পরিচালক মো. জাকের হোসেন শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন। বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে সোনালী ব্যাংকের সিইও ও এমডি আফজাল করিম, ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও সিইও সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন, ইসলামী ব্যাংকের এমডি ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা এবং আইএফআইসি ব্যাংকের এমডি ও সিইও শাহ্ এ সারওয়ার বক্তব্য প্রদান করেন।

বিভিন্ন ব্যাংকের অধীনে প্রশিক্ষণ কোর্স সমাপ্তকারী উদ্যোক্তাদের মধ্য হতে ৮৮ জনের মধ্যে প্রতিকী চেক তুলে দেওয়ার মাধ্যমে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে এন্টারপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইডিপি) এর ভূয়সী প্রশংসা করে বক্তব্য রাখা হয়।

এসব উদ্যোক্তারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়মিত এ ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজনের পরামর্শ দেন। যাতে দেশের প্রান্তিক উদ্যোক্তারাও এই প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের ব্যবসা সফলভাবে পরিচালনা করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন।

অর্থসূচক/এমএইচ/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.