ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির রেকর্ড দর পতন

মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির রেকর্ড দরপতন হয়েছে। এক ডলারের বিনিময়ে পাওয়া যাচ্ছে ৮২ দশমিক ৯৫ রুপি। বুধবার (১৯ অক্টোবর) দরপতনের নতুন রেকর্ড গড়েছে ভারতীয় এই মুদ্রার। প্রতি মাসেই অন্তত কয়েকবার রুপি নতুন-নতুন রেকর্ড গড়ছে।

আলোচিত দিনে ভারতীয় ব্লুমবার্গ চালুর পর ৮২ দশমিক ৩০ রুপিতে লেনদেন শুরু হয়ে শেষ হয় ৮২ দশমিক ৯০ রুপিতে।

ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামান বলেছেন, মূলত ডলার ক্রমাগত শক্তিশালী হওয়ার কারণেই ভারতীয় মুদ্রার পতন হচ্ছে, আর সে কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

নির্মলা আরো বলেন, রুপির দরপতন ঠেকাতে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) নিজেদের সেরাটা দিয়ে কাজ করছে।

সম্প্রতি আইএফএ গ্লোবাল রিসার্চ একাডেমি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ছে। সে কারণে রুপি দাম হারিয়েছে। তাদের দাবি ছিল, এতদিন আরবিআই কম খরচ করে কোনোমতে পরিস্থিতি ঠেকিয়ে রেখেছিল, কিন্তু এখন তা আর সম্ভব হচ্ছে না। আরবিআই জানিয়েছে, তাদের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় (ফোরেক্স রিজার্ভ) ৪৮ দশমিক ৫৪ কোটি ডলার কমেছে, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৪০ হাজার কোটি ৫ লাখ ৬৭ রুপি। বর্তমানে ভারতের রিজার্ভ ৩৭১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

আইএফএ গ্লোবাল রিসার্চ একাডেমি জানিয়েছে, ভারত খরচের বিষয়ে সচেতন হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ভারতীয় মুদ্রা নিয়ে নির্মলার মন্তব্য নয়া মাত্রা যোগ করলো।

ইতিপূর্বে ২০১৩ সালেও ডলারের সাপেক্ষে ভারতীয় মুদ্রার বড় পতন হয়েছিল। ঐ সংকট মোকাবিলা করতে তখন রিজার্ভ ব্যাংক যে সব ব্যবস্থা নিয়েছিল তা এখন তেমন কাজে দেবে না বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। তাদের মতে, তখন ও এখনকার আর্থিক অবস্থার মৌলিক উপাদানগুলোর মধ্যে অনেকটা ফারাক রয়েছে। শুধু ডলারের দর বৃদ্ধিই নয়, দেশের আর্থিক অবস্থাও নড়বরে রয়েছে।

২০১৩ সালে ডলারের বিপরীতে রুপির দরপতন হয়েছিল ১১ শতাংশ। এবার ইতিমধ্যেই পূর্বের মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে।

ডলার ৮২ রুপি ছাড়িয়েছে, এমনকি ডলার ৮৪ রুপিও ছুঁতে পারে বলে ধারণা অনেকের। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এবং আমদানি খাতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, চলতি অর্থবছরে তা জিডিপির ৩ শতাংশের ওপরেই থাকতে পারে। এখন আট মাসের আমদানি খরচ মেটানোর মতো ডলার আরবিআই ব্যাংকের হাতে আছে, কিন্তু আমদানি খরচ বেড়ে ডলারের মজুত কমতে থাকলে উদ্বেগ বাড়তে পারে।

জুলাইয়ে বিদেশি মুদ্রায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আরবিআই। এর অন্যতম হচ্ছে সরকারি ঋণপত্রে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ অনুমোদন। ভারতীয় ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রার আমানত বৃদ্ধি করতে ব্যাংকগুলোকে সুদ ঠিক করার স্বাধীনতা দান ইত্যাদি।

কিন্তু বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, উল্লেখিত পদক্ষেপ ২০১৩ সালে যেমন কাজ করেছিল, এবার তেমন করেনি। ফলে রুপির মান ধরে রাখতে রিজার্ভ ব্যাংকের ডলার বিক্রি ছাড়াও আরও কিছু ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। অনেকের পরামর্শ, অতীতের মতো রিসারজেন্ট ইন্ডিয়া বন্ড বা মিলেনিয়াম ডিপোজ়িট বন্ড ছাড়লে ভালো ফল মিলতে পারে।

সূত্র: এনডিটিভি,পিটিআই

অর্থসূচক/এএম/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.