রিজার্ভে ধারাবাহিক পতন, সংকট কাটাতে চলছে গবেষণা

রিজার্ভে ধারাবাহিক পতন কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই ব্যাপকভাবে রিজার্ভ কমছে। সেপ্টেম্বরে রফতানি আয়ের সঙ্গে রেমিট্যান্স কমে রিজার্ভে আরও বড় ধাক্কা দেয়।

চলতি অর্থবছরে সব মিলিয়ে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে বর্তমানে রিজার্ভ কমে দাড়িয়েছে ৩ হাজার ৬২২ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সংকট কাটাতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

দেশের অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে রফতানি আয়। হঠাৎ করেই সেপ্টেম্বরে রফতানি খাতের আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। গত মাসে রফতানি আয় হয় ৩৯০ কোটি ডলার। আগের বছরের সেপ্টেম্বরে একই সময়ে রফতানি আয় হয়েছিল ৪১৬ কোটি ডলার। হুট করে রফতানি আয় এভাবে কমে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে রিজার্ভে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদ অর্থসূচককে বলেন, দৈনন্দিন বিক্রি রেটে ডলার মার্কেটে ছেড়ে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চলছে। ব্যাংকগুলোর কাছে ৯৭ টাকা দরে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। আমদানির ক্ষেত্রে কিছু নীতি আরোপ করা হয়েছে। আমদানি দ্রব্যের কোয়ালিটি-কোয়ান্টিটি এবং কম্পিটিটিভ প্রাইসে নীতি আরোপ করা হয়েছে। এসব আমদানি দ্রব্যের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা তাও দেখা হচ্ছে। এগুলোর উপর ভিত্তি করে আশা করা যায় ডলারের দর নিয়ন্ত্রণে আসবে।

তিনি আরও বলেন, এক্ষেত্রে দৈনন্দিন বিক্রি রেটে ডলার মার্কেটে ছাড়লে রিজার্ভে চাপ বাড়ে। এসব পলিসিগুলো নেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বিশেষজ্ঞদল গভীর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিভাবে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায় সে বিষয়ে তারা গবেষণা করছেন।

জানা যায়, ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ বেড়ে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলারে উঠেছিল। এরপর নানা সংকটে কমতে থাকে রিজার্ভ। গত বছরের অক্টোবরে রিজার্ভ কমে ৪৬ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিলো। এরপর চলতি বছরের জুনে রিজার্ভ আরও কমে দাড়ায় ৪১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক সব মিলিয়ে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। ফলে রিজার্ভ আরও কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬২২ কোটি ডলার।

অপরদিকে চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয়েও পতন হয়। এতে বড় ধাক্কা খায় দেশের অর্থনীতি। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে সংকট কাটিয়ে ওঠার আশা দেখায় রেমিট্যান্স। তবে সেপ্টেম্বরের রেমিট্যান্স ধাক্কায় আবারও রিজার্ভে টান পড়েছে। সেপ্টেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স আসে ১৫৩ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। এর আগের বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় যা ১৮ কোটি ৭২ লাখ ডলার কম। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে এসেছিলো ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার।

ব্যাংকের মাধ্যমে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ ডলার। এটি তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম। আগের ২০২০-২০২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

এদিকে চলতি মাসের প্রথম ১৩ দিনে দেশে রেমিট্যান্স আয় এসেছে ৭৬ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। প্রতি ডলার ১০৮ টাকা হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। যা আগের মাসের একই সময়ের তুলনায় কম। আমদানি কমিয়ে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সে জোর দিয়ে বাড়ানো যাচ্ছে না রিজার্ভে। এতে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক সংকট তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমানে রিজার্ভ রয়েছে ৩ হাজার ৬২২ কোটি ডলার। গত মাসে আমদানি বলি পরিশোধ করা হয় ৫৭০ কোটি ডলারের। এর আগের মাস আগস্টে পরিশোধ করা হয় ৫৯৩ কোটি ডলার। আমদানি কমানো ও রেমিট্যান্সে জোর দেওয়া সহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। এতেও রিজার্ভে চাপ কমানো যাচ্ছে না। ফলে সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করছে।

অর্থসূচক/সুলাইমান/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.