কংগ্রেসের নতুন সভাপতি খাড়গে

২৪ বছর পর নেহরু-গান্ধী পরিবারের বাইরের কেউ কংগ্রেস সভাপতি হলেন। দ্বিতীয়বার এক দলিত নেতা কংগ্রেস সভাপতি হলেন। এবার কর্ণাটকের দলিত নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে কংগ্রেসের সভাপতি হলেন। হারালেন দক্ষিণ ভারতের আরেক নেতা কেরলের শশী থারুরকে।

মোট নয় হাজার পাঁচশজন ভোট দিয়েছিলেন। তারমধ্যে খাড়গে পেয়েছেন সাত হাজার ৮৯৭ ভোট এবং শশী থারুর এক হাজার ৭২ ভোট। কিছু ভোট বাতিল হয়েছে। ঘোষণা করা না হলেও খাড়গে ছিলেন গান্ধী পরিবারের প্রার্থী। শশী থারুর ভোটে লড়ার আগে সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করলেও, তাকে সমর্থন জানায়নি গান্ধী পরিবার। কংগ্রেসের অন্দরে শশী থারুর বিক্ষুব্ধ জি২৩ গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত।

গান্ধী পরিবার প্রথমে ঠিক করেছিল, তারা রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটকে সভাপতি পদে সমর্থন করবে। কিন্তু গেহলট মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে চাননি, উল্টে বিদ্রোহ করেছিলেন। তাই পরে খাড়গেকে সমর্থন করে গান্ধী পরিবার।

৮০ বছর বয়সি নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গের জয় নিয়ে কোনো সংশয় ছিল না। শশী থারুরও প্রচারের জন্য দেশের অনেক রাজ্যেই ঘুরেছেন। কিন্তু শশী থারুরের বৈঠকে যোগ দেয়ার জন্য কংগ্রেস নেতারা খুব একটা উৎসাহ দেখাননি। ফলে থাড়গের জিতবেন তা বোঝা যাচ্ছিল। দেখার ছিল, থারুর কত ভোট পান। দেখা গেল, বিপুল ব্যবধানেই জিতেছেন খাড়গে। তবে থারুর যে এক হাজারের বেশি ভোট পেয়েছেন, তা যথেষ্ট কৃতিত্বের বলে কংগ্রেস নেতারাই মানছেন।

ভোট গণনার মাঝপথেই গুরুতর অভিযোগ করেন শশী থারুর। তিনি বলেন, উত্তরপ্রদেশে ভোটে গুরুতর বেনিয়ম হয়েছে। সেখানে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হয়নি। ভোটে কারচুপি হয়েছে। ভোটে জালিয়াতি হয়েছে বলে আমাদের মনে হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের ঘটনা মেনে নিলে কী করে এই ভোটকে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ বলা যাবে?

ফলাফল বেরনোর পর অবশ্য শশী থারুর বলেছেন, তিনি খাড়গেতে অভিনন্দন জানাচ্ছেন।

নতুন সভাপতি পেল কংগ্রেস। গান্ধী পরিবারের বাইরের নেতা দীর্ঘদিন পরে দলের সভাপতি হলেন। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, কংগ্রেসের হাল কি ফিরবে? ২০১৪ সালের পর থেকে কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে একটার পর একটা নির্বাচনে কংগ্রেস হেরেই চলেছে। বিভিন্ন রাজ্যে দলের অবস্থা খারাপ হচ্ছে।

পাঞ্জাবে কংগ্রেসকে প্রায় মুছে দিয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ। এতদিন হিমাচল ও গুজরাটে বিজেপি-র প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল কংগ্রেস। কিন্তু এবার দুই রাজ্যে আপ খুবই তোড়জোড় করে ভোটে লড়ছে। আপ নেতারা হিমাচল নিয়ে খুবই আশাবাদী। গুজরাটেও প্রায় প্রতি সপ্তাহেই গিয়ে প্রচার করছেন কেজরিওয়াল। নরেন্দ্র মোদীও বেশ কিছুদিন আগে থেকে দুই রাজ্যে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু কংগ্রেস সেভাবে জাগেইনি।

নতুন সভাপতিকে প্রথমেই দুই রাজ্যের ভোটের মুখে পড়তে হবে। সেখানে কংগ্রেসের ফল খারাপ হলে তাকে নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করবে। কিন্তু সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটা উঠছে, কংগ্রেস সভাপতি কি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন, না কি, রিমোট কন্ট্রোল সেই গান্ধী পরিবারের হাতেই থাকবে? নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পশ্চিমবঙ্গের এক কংগ্রেস নেতা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ‘খাড়গে তো গান্ধী পরিবারের প্রার্থী। তাই তিনি পরিবারের কথা শুনবেন, সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে।’

প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘খাড়গেকে তো কংগ্রেসের হাল ফেরাবার জন্য সভাপতি করা হয়নি। মোদী বারবার পরিবারতন্ত্রর কথা বলছিলেন। সেই অভিযোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য করা হয়েছে। খাড়গে পরিবারের কথা শুনে চলবে। পরিবারই কংগ্রেস চালাবেন। শশী থারুর সভাপতি হলে পরিবারের সঙ্গে সংঘাত হত। সেটা গণতন্ত্রের পক্ষে ভালো। অতীতে বহুবার হয়েছে। কিন্তু গান্ধী পরিবার সেটা চায়নি।’

তখনো ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। তখনই রাহুল জানিয়ে দেন, খাড়গে তার ভূমিকা ঠিক করবেন। তিনি জানিয়েছেন, কংগ্রেসে সভাপতি হলেন সর্বোচ্চ। তিনিই সবকিছু ঠিক করেন। সভাপতি যা বলবেন, তিনি সেই ভূমিকা পালন করবেন।

তবে কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, রাহুল গান্ধী এখন যেভাবে চলছেন, পরেও সেভাবেই চলবেন। তিনিই দলের মুখ থাকবেন। কিন্তু কোনো পদে থাকবেন না। তাতে কংগ্রেসের কি খুব বেশি লাভ হবে? সূত্র: ডিডাব্লিউ, পিটিআই

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.