কৃষি ঋণে খেলাপির আশঙ্কা কম

বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস ও অতিবৃষ্টিসহ নানা কারণে কৃষকরা ফসল উৎপাদনে ব্যর্থ হন। ফসল আহরণেও সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। এরপরেও অধীকাংশ কৃষক ব্যাংক ঋণ সময়মতো পরিশোধ করছে। গত অর্থবছরে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ২৮ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। যেখানে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। সুতরাং অন্যান্য খাতের তুলনায় কৃষি ঋণে খেলাপির আশঙ্কা কম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অন্যদিকে জুন পর্যন্ত কৃষি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৪৯ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় করা হয়েছে ৩৫ হাজার ১১৯ কোটি। সুতরাং আদায় হার ৭৮ শতাংশের বেশি। সুতরাং কৃষি ঋণে খেলাপির পরমাণ কম। এরপরেও বেশ কিছু ব্যাংক কৃষি খাতে ঋণ দিতে আগ্রহ দেখায় ‍না। অপরদিকে এসব ব্যাংকগুলো শিল্প খাতে ঋণের পরিমাণ বাড়াচ্ছে। ফলে খাতটিতে বাড়ছে খেলাপির পরিমাণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত বছরে শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৮১ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৮৭ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা বা ২২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। বড় অঙ্কের ঋণ বাড়লেও ২০২১-২০২২ অর্থবছরে আদায় হয়েছে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। হিসাব অনুযায়ী বিতরণের তুলনায় আদায়ের হার ৭১ শতাংশ। এ ছাড়া শিল্প খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার ১৪৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকায়; যা বিতরণ করা মোট ঋণের ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টদের মতে, কৃষি, এসএমই ও ক্ষুদ্র ঋণে পরিশ্রম বেশি হওয়ার কারণে বেশ কিছু ব্যাংক ঋণ দিতে চায় না। কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বাড়লে প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরি হয়। ফলে দেশের সার্বিক অর্থনীতি লাভবান হয়। শিল্পসহ অন্য সকল খাতের চেয়ে কৃষিতে ঋণ বিতরণ অনেক কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জুন পর্যন্ত শিল্প খাতে খেলাপি ঋণের মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় রয়েছে ৪৭ হাজার ৬১৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় ১০ হাজার ৫২৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি বেসরকারি ব্যাংকে। বেসরকারি ব্যাংকে ১৯ হাজার ৬৮৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা বা ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এসব ব্যাংকের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৮২৫ কোটি টাকায়।

এরপর রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকে খেলাপি ১৯ হাজার ৫২৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ২২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। তাদের ঋণ স্থিতি ৮৬ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকে ১ হাজার ১০১ কোটি ১৩ লাখ টাকা খেলাপি বা ২৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। এসব ব্যাংকের ঋণ স্থিতি ৪ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।

এছাড়া বিদেশি ব্যাংকে ১ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা খেলাপি বা ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ২০৭ কোটি টাকায়। এছাড়া ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোয় ৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা খেলাপি বা ৭ দশমিক ৫১ শতাংশ। এ সময়ে ব্যাংকগুলোয় ঋণ স্থিতি ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা।

করোনার মধ্যে দেশের অন্যান্য খাতের মতো কৃষি খাতে উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছিলো। এসময় কৃষকদের পক্ষে নিয়মিতভাবে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। এমন পরিস্থিতে কৃষি ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় দিয়েছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক।

অর্থসূচক/এমএইচ/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.