সাদিয়া আফরিন: ভ্রমণপিপাসুদের জন্য একটু ভিন্ন আঙ্গিকে পযটন কেন্দ্র করছে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ। গহীন বনের মধ্যে থাকা প্রাচীন মন্দির ও ঘর-বাড়ির ধ্বংসাবশেষ ঘিরে ওই স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি বাঘ, হরিণ, বানর আর কুমিরের বিচরণক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত কালাবগী ফরেস্ট স্টেশনেও পযটন কেন্দ্রের আওতায় আনা হয়েছে।
আগে বনের মধ্যে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ ছিল না। নতুন ওই দুই পযটন কেন্দ্রে ছোট ডিঙ্গি নৌকায় করে ঘন্টা চুক্তিতে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করা যাবে। বর্তমানে স্থান দুটিতে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে পরযটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হবে।
আগে সুন্দরবন ভ্রমণ করার প্রধান পথ ছিল সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের আওতাধীন বাগেরহাট অঞ্চল দিয়ে। এছাড়া সাতক্ষীরার শ্যামনগর হয়েও সুন্দরবন ভ্রমণ করা যেত। সুন্দরবনের একটি বড় অংশ খুলনার মধ্যে পড়লেও পরযটনকেন্দ্র না থাকায় খুলনা রেঞ্জ দিয়ে বন ভ্রমণের কোনো সুযোগ ছিল না। গত কয়েকবছর আগে কালাবাগী ও শেখেরটেক এলাকাকে পরযটনের স্থান করে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় বন বিভাগ। গতবছর সেটি অনুমোদন করা হয়েছে। চলতি বছর থেকে ওই দুই স্থানে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু করেছে বন বিভাগ।

শেখের টেক এলাকার বনের মধ্যে রয়েছে একটি প্রাচীন মন্দির। মন্দিরটি নিয়ে কোনো গবেষণা বা সার্ভে হয়নি, তাই সেটি কত বছরের প্রাচীন তা কেউ বলতে পারেন না। ওই মন্দিরের আশপাশে ছড়িয়ে রয়েছে কয়েকটি প্রাচীন বাড়ির ধ্বংসাবশেষ। ওই স্থানটি বনবিভাগ ও স্থানীয় মানুষের কাছে শেখের বাড়ি নামে পরিচিত। দারুণ সৌন্দযের স্থানটি যে কোনো মানুষকেই মুগ্ধ করবে। মন্দির ও প্রাচীন বাড়িগুলোর মধ্যে সংযোগ করার পরিকল্পনা করছে বন বিভাগ।
এছাড়া কালাবগী ফরেস্ট স্টেশনের নদীর অপর পাড়েই সর্বশেষ লোকালয়। স্টেশনের মধ্যেই নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ায় হরিণ, বানরসহ বিভিন্ন জীবজন্তু। আর সামনের নদীতে মাঝে মাঝে ভেসে ওঠে কুমির। বাঘের হুংকারও ভেসে আসে মাঝে মাঝে।
ওই দুই স্থানে হবে ৫০ ফুট উঁচুর দুটি পযবেক্ষণ টাওয়ার। বনের মধ্যে ঘুরে বেড়ানোর জন্য থাকবে প্রায় ১ কিলোমিটার ফুট ট্রেইল (হাটার পথ)। এছাড়া নদী থেকে মন্দিরে যাওয়ার জন্য ৬০০ মিটারের মতো ছোট ইটের হাটা পথ তৈরি করা হচ্ছে।

বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এতোদিন যারা সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন তাঁরা বন সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। বনে কিছু নেই বা কিছু না দেখতে পাওয়ার আকাঙ্খা থেকে যায় তাঁদের। এমন পরিপ্রেক্ষিতে সুন্দরবন সম্পর্কে পরযটকদের ধারণা পরিবর্তন করতে ওই দুটি পযটন কেন্দ্র করা হয়েছে। ওই দুটি কেন্দ্র ভ্রমণ করে কেউ ‘কিছু না দেখতে পাওয়ার’ হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরবেন না বলে মনে করেন তাঁরা।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, প্রকৃতি ও বণ্যপ্রাণীকে বিরক্ত না করে ওই দুই স্থানে পযটকদের ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ কাজে পুরোপুরি অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে সুন্দরবনের সহব্যবস্থাপনা কমিটিকে। ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে বন ভ্রমণের সুযোগ রাখা হয়েছে। বিকল্প পেশা হিসেবে বনজীবিদের ওই কাজে অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তাঁদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
অর্থসূচক/এসএ/