জাপানি নাগরিক হত্যা: ১ জনের খালাসের আদেশ স্থগিত

জাপানি নাগরিক হোশি কুনিওকে হত্যার দায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) অন্যতম সদস্য ইছাহাক আলীকে (২৫) হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন।

২০১১ সালের ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসেন জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও। রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার কাচু আলুটারি গ্রামে গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে উন্নত মানের ঘাসের চাষ করতেন তিনি। ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর কাচু আলুটারি গ্রামে ৬৬ বছর বয়সী কুনিওকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঢাকার গুলশানে ইতালীয় নাগরিক সিজার তাবেলাকে হত্যার পাঁচ দিনের মাথায় একই কায়দায় রংপুরে জাপানি নাগরিক হত্যার ওই ঘটনা তখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যনমেও আলোড়ন তোলে। পরে উভয় ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস (ইসলামিক) দায় স্বীকার করেছিল। যদিও বাংলাদেশ সরকার তা নাকচ করে দেয়। পরে অবশ্য পুলিশ কুনিও হত্যার জন্য নব্য জেএমবিকে দায়ী করে। আর সিজার তাবেলা হত্যায় বিএনপির একজন নেতাসহ কয়েকজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

এদিকে, ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর হোশি কুনিওকে হত্যার দিনই কাউনিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির নামে হত্যা মামলা করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করে পুলিশ।

ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষে ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জেএমবির পাঁচ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায় দেন রংপুরের বিশেষ জজ আদালতের বিচারক নরেশ চন্দ্র সরকার। মামলার রায়ে পাঁচ আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করতে বলা হয়। পাশাপাশি ওই পাঁচ জনের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো– জেএমবির আঞ্চলিক কমান্ডার মাসুদ রানা ওরফে মামুন (২১), সদস্য ইছাহাক আলী (২৫), লিটন মিয়া ওরফে রফিক (২৩), সাখাওয়াত হোসেন (৩২) ও আহসান উল্লাহ আনসারী ওরফে বিপ্লব (২৪)। তাদের মধ্যে আহসান উল্লাহ পলাতক। সে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। বাকি তিন আসামি মাসুদ রানা, ইছাহাক ও লিটন কারাগারে আছে। তিন জনই আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছিল। হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পায় পীরগাছার কালীগঞ্জ বাজারের আবু সাঈদ (২৮)।

চার্জশিটভুক্ত আট আসামির মধ্যে অন্য দুজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাদের মামলার অভিযোগ থেকে বাদ দিয়ে রায় ঘোষিত হয়। তাদের মধ্যে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের গজপুরি এলাকার নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক হাসান (২৮) ২০১৬ সালে অভিযোগ গঠনের আগে ১ আগস্ট রাজশাহীতে এবং কুড়িগ্রামের রাজারহাটের চর বিদ্যানন্দ এলাকার সাদ্দাম হোসেন ওরফে রাহুল ওরফে চঞ্চল ওরফে সবুজ ওরফে রবি (২১) অভিযোগ গঠনের পরে ঢাকার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। পরে আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য নথি) হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি আসামিরা আপিল ও জেল আপিল দায়ের করে।

সেসব আবেদনের শুনানি শেষে হোশি কুনিওকে হত্যার দায়ে মামুন , লিটন, সাখাওয়াত ও আহসান উল্লাহর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন হাইকোর্ট। তবে একইসঙ্গে জেএমবি সদস্য ইছাহাক আলীকে (২৫) খালাস দেন আদালত।

পরে গত ২২ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় জেএমবির অন্যতম সদস্য ইছাহাক আলীকে হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের আদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন জানায় রাষ্ট্রপক্ষ।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.