ইউক্রেনীয়রা ভয় পান না, পালিয়ে যান না, দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেন: জেলেনস্কি

২৪ অগাস্ট ছিল ইউক্রেনের স্বাধীনতা দিবস। যুদ্ধের জন্য উৎসব পালনে বহু বাধানিষেধ জারি করা হয়েছিল। কিয়েভে সমস্তরকম জমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে দিনভর কারফিউ জারি করা হয়েছিল। তবে দেশের মানুষকে কুর্নিশ জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একটি লম্বা বক্তৃতা করেছেন। সেখানেই তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের পুনর্জন্ম হয়েছে।

২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর চারটের সময় রাশিয়া প্রথম ইউক্রেনে হামলা করেছিল। ২৪ অগাস্ট তার ছয়মাস পূর্ণ হয়েছে। জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার আক্রমণ এক নতুন ইউক্রেনের জন্ম দিয়েছে। ইউক্রেনের মানুষ দেখিয়ে দিয়েছেন, তারা ভয় পান না, পালিয়ে যান না, কাঁদেন না। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেন। একসময় আমরা বলতাম, যুদ্ধের শেষে শান্তি ফেরে। এখন বলি, যুদ্ধের শেষে জয় আসে। চলতি যুদ্ধে জয় ইউক্রেনেরই হবে বলে এদিন দেশের মানুষের কাছে অঙ্গীকার করেছেন তিনি।

এদিন ইউক্রেনের প্রশাসন রাজধানী শহর কিয়েভের মাঝখানে রাশিয়ার ট্যাঙ্কের ধ্বংসাবশেষ জড়ো করে। স্বাধীনতা দিবসের উৎসবে ওই ট্যাঙ্কগুলি জয় হিসেবে প্রদর্শিত হয়। তবে এদিনও ইউক্রেনের সেনা বেসামরিক মানুষদের প্রতি সতর্কবার্তা প্রচার করেছে। তারা বলেছে, সাধারণ মানুষ এখন আর এয়ার রেড সাইরেন যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে মানছেন না। সাইরেন বাজলে বাঙ্কারে ঢুকতেই হবে। কারণ, যে কোনো সময় রাশিয়া বড়সড় হামলা করতে পারে।

জাতিসংঘের এক বৈঠকে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইউক্রেনের একটি রেল স্টেশনে রাশিয়া মিসাইল হামলা চালিয়েছে। বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন। ১৫ জন নিহত হয়েছেন। পরে তা বেড়ে হয় ২২। আহত পঞ্চাশেরও বেশি। চ্যাপলিনো স্টেশনে ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। নিহতদের অধিকাংশই বেসামরিক মানুষ। জেলেনস্কি এদিন ফের দাবি করেছেন, রাশিয়া বেছে বেছে বেসামরিক এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে।

এদিকে পুতিনের বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার পরিকল্পনা করছে ইউক্রেন। আগামী বছরের গোড়ায় মামলা দায়ের হতে পারে। ইউক্রেনের প্রশাসন জানিয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উচ্চপদস্থ সেনা অফিসারদের বিরুদ্ধে এই মামলা হবে। যুদ্ধাপরাধের ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। একমাত্র আন্তর্জাতিক আদালতেই এই মামলা করা সম্ভব বলে তারা জানিয়েছে। এই মামলা থেকেই প্রমাণ হয়ে যাবে, কারা এই যুদ্ধ শুরু করেছিল। বস্তুত, এর আগেও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলেছিলেন।

এদিকে এই সপ্তাহেই ইউক্রেনের দখল করা এলাকায় রাশিয়া গণভোট শুরু করতে পারে বলে মনে করছে হোয়াইট হাউস। বুধবার হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই সপ্তাহেই ভোটের ফলাফল ঘোষণা করে দিতে পারে রাশিয়া। দখল করা এলাকাগুলিতে গণভোটের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে বলে তার দাবি।

২০১৪ সালে ঠিক একইভাবে ক্রাইমিয়ায় গণভোট করেছিল রাশিয়া। এরপর ক্রাইমিয়া তাদের অঞ্চল বলে দাবি করেছিল। এবারেও সেই একই ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইউক্রেন গোড়া থেকেই এর তীব্র বিরোধিতা করছে। পশ্চিমা দেশগুলিও বিরোধিতা করছে। কিন্তু রাশিয়া এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। সূত্র: ডিডাব্লিউ, রয়টার্স, এপি, এএফপি, ডিপিএ

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.