ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। একইসঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের বর্তমান ও আগের সব ধরনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে বলে অর্থসূচককে নিশ্চিত করেছেন বিএফআইইউ’র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
তাকসিম ও তার পরিবারের সদস্যদের তথ্য চেয়ে গত বৃহস্পতিবার সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের চিঠি দিয়েছে বিএফআইইউ। চিঠিতে ওয়াসার এমডির পরিবারের সদস্যদের তালিকা দিয়ে তাদের ব্যাংক হিসাবের পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসার এই এমডি সব মিলিয়ে বেতন-ভাতা পান ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে তার মূল বেতন ২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। দেশের রাষ্ট্রপতির মূল বেতন যেখানে দেড় লাখ টাকা। সেখানে সংবিধিবদ্ধ সংস্থা ঢাকা ওয়াসার এমডির মূল বেতন প্রায় তিন লাখ টাকা।
সম্প্রতি, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান গত ১৩ বছর ধরে বেতন-ভাতা বাবদ কত টাকা নিয়েছেন, সেই হিসাব দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক রিট আবেদনের শুনানিতে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেয়।
আগামী ৬০ দিনের মধ্যে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডকে এই হিসাব দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতে ক্যাবের রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।
রিটে বলা হয়, ২০০৯ সালের অক্টোবরে তাকসিম এ খান ওয়াসার এমডি হিসেবে ৩ বছরের জন্য চুক্তিতে নিয়োগ পান। তখন তার মোট বেতন ছিল মাসে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে মূল বেতন ছিল ৬০ হাজার টাকা। এছাড়া বাড়ি ভাড়া হিসেবে ২০ হাজার টাকা, ৪ হাজার টাকা মেডিকেল ও বিনোদন ভাতা এবং ২২ হাজার টাকা বিশেষ ভাতা পেতেন তিনি। এছাড়া তার উৎসব ভাতা ছিল ১০ হাজার টাকা।
তার সঙ্গে চুক্তিতে বলা ছিল, বেতনের ওপর প্রযোজ্য আয়কর তাকসিম এ খানকেই দিতে হবে। এরপর ২০১০ সালে ওয়াসার এমডির বেতন ২ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ২০১৬ সালের ২৪ জানুয়ারি ওয়াসা বোর্ডের ২৩১তম সভায় এমডির বেতন নির্ধারণ করা হয় সাড়ে ৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ, এক লাফে এমডির বেতন বাড়ে আড়াই লাখ টাকা, যা কার্যকর হয় ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে।
পরে ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের ২৭২তম সভায় এমডির পারিশ্রমিকসহ সুযোগ-সুবিধা, বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সম্মানী পুনর্নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি করা হয়। সেই কমিটি দুই দফায় বৈঠক করে এমডির বেতন-ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব করে। গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের ২৭৬তম সভায় কমিটির প্রস্তাবের ভিত্তিতে এমডির বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা হয় ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে তার মূল বেতন ২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা, বাড়িভাড়া ৩৫ হাজার, চিকিৎসা ও আপ্যায়ন ভাতা ৩৫ হাজার ৭৫০ টাকা, বিশেষ ভাতা ১ লাখ ৮০ হাজার ৬৬ টাকা এবং বাংলা নববর্ষ ভাতা ৪ হাজার ৭৬৭ টাকা। তার উৎসব ভাতা ঠিক হয় ৪৭ হাজার ৬৬৭ টাকা।
২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে প্রথমবারের মতো নিয়োগ পেয়েছিলেন তাকসিম এ খান। এরপর চার দফায় বাড়ানো মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর। তার সপ্তাহ দুয়েক আগে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে তাকসিমের মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ায় সরকার।
অর্থসূচক/এমএস/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.