কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে (সিএমএসএমই) খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে ২৫ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ৪৬ টি ও ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক ব্যাংক এই ঋণচুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন।
বুধবার (২৪ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের শর্ত মেনে ৪৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই ঋণচুক্তিতে অংশগ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে ঋণচুক্তি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাসের, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. ওবায়দুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মনোজ কুমার হাওলাদারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তহবিলটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সিএমএসএমই খাতে মেয়াদি ঋণের বিপরীতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিম’। বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে গঠিত এই তহবিল থেকে গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের এই তহবিল থেকে ২ শতাংশ সুদে অর্থ নিয়ে উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করবে।
প্রাথমিকভাবে স্কিমটির মেয়াদ হবে ৩ বছর। আর গ্রাহক পর্যায়ে গ্রেস পিরিয়ডসহ ঋণের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৫ বছর। তহবিলের আকার ২৫ হাজার কোটি হলেও প্রয়োজনে তা বাড়ানো হবে।
সাধারণত পূনঅর্থায়ন স্কিম সুবিধা গ্রহণ করতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ হতে হয়। সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারে। কিন্তু এবার রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের বেলায় এই সুবিধা বহাল রাখা হলেও বেসরকারি, বিদেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য শর্ত যোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শর্তে বলা হয়, কোনো ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণ/বিনিয়োগের হার ১০ শতাংশের কম হতে হবে, ন্যূনতম ৩ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
আর পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা নেওয়া সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঋণ-আমানত অনুপাত, তারল্য অবস্থাসহ একাধিক সূচক বিবেচনায় নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শাখা, উপশাখার পাশাপাশি এজেন্ট ব্যাংকিং ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (এমএফএস) মাধ্যমেও এই ঋণ বিতরণ করা যাবে বলে জানা গেছে।
এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম অর্থসূচককে বলেন, সিএমএসএমই খাত দেশের কর্মসংস্থানে বড় ভূমিকা রাখে। দেশের সিএমএসএমই খাতে নিয়োজিত উদ্যোক্তাদের মাঝে সহজ শর্তে ঋণের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব হলে তা জাতীয় অর্থনৈতিকভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জনকে অধিকতর গতিশীল করবে। সেই লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত ৪৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
শর্তের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া শর্ত মেনেই এই ঋণচুক্তি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শর্ত মেনে যে কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান চাইলেই এই ঋণচুক্তি করতে পারবে।
এই পুনঃঅর্থায়ন তহবিল বিষয়ে সম্প্রতি একটি নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে বলা হয়েছে, উদ্যোক্তাদের মাঝে ঋণ বিতরণ করতে ক্লাস্টারভিত্তিক তালিকা তৈরি করে মোট ঋণ বিতরণের হার নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ক্লাস্টার তালিকার মধ্যে রয়েছে- কৃষি/খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক শিল্প, তৈরি পোশাক শিল্প, নিটওয়্যার, ডিজাইন ও সাজসজ্জা, আইসিটি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য শিল্প, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, পাট ও পাটজাত শিল্প।
অগ্রাধিকার ক্লাস্টারগুলোর মধ্যে রাখা হয়েছে- প্লাস্টিক ও অন্যান্য সিনথেটিক শিল্প, পর্যটন শিল্প, হোম টেক্সটাইল সামগ্রী, নবায়নযোগ্য শক্তি (সোলার পাওয়ার), অটোমোবাইল প্রস্তুত ও মেরামতকারী শিল্প, তাঁত, হস্ত ও কারুশিল্প, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি (এলইডি, সিএফএল বাল্ব উৎপাদন)/ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি নির্মাণ শিল্প/ইলেকট্রনিক মেটেরিয়াল উন্নয়ন শিল্প, জুয়েলারি, খেলনা তৈরি, প্রসাধনী ও টয়লেট্রিজ শিল্প, আগর শিল্প, আসবাবপত্র শিল্প ও ইল/কম্পিউটার/টেলিভিশন সার্ভিস খাত ইত্যাদি।
এসব ক্লাস্টারের আওতায় নারী উদ্যোক্তা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন উদ্যোক্তা এবং যে কোনো দুর্যোগে (যেমন: নদী ভাঙন, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, মঙ্গা, অগ্নিকা-, ভূমিকম্প, ভবনধস, কোভিড-১৯ এর মত অতিমারী ইত্যাদি) ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ স্কিমের আওতায় পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা দিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিতরণ করা মোট ঋণের ন্যূনতম ৭০ শতাংশ উৎপাদন ও সেবা খাতে এবং সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ ব্যবসা খাতে বিতরণ করার কথাও বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাঝে এবং সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ মাঝারি উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ,আদায় ও সদ্ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয় চুক্তিবদ্ধ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরা তদারকির মাধ্যমে নিশ্চিত করবে। ক্ষেত্রবিশেষে দ্বৈবচয়ন ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে কোনো সময়ে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
অর্থসূচক/এমএস/এমএস



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.