‘সংসদ সদস্যরা মুখ চালান না, হাত-পা চালান’

সংসদ সদস্যরা আর মুখ চালান না, হাত-পা চালান বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, শিক্ষকদের ওপরই হাত-পা বেশি চালানো হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক সংকুচিত হয়ে গেছে। নির্বাচনের আগে উভয় পক্ষের মধ্যে কিছু সংযোগ হতো। কিন্তু এখনকার নির্বাচন পদ্ধতিতে এই সংযোগ দরকার হয় না।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, দেশের রাজনীতিতে নতুন সংস্কৃতি চালু হয়েছে। এখন সংসদ সদস্যরা আর মুখ চালান না, হাত-পা চালান। এই প্রকৃতির সংসদ সদস্যদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। শিক্ষকদের কথা আজকের আলোচকেরা বলেছেন; বাস্তবতা হচ্ছে, শিক্ষকদের ওপরই হাত-পা বেশি চালানো হচ্ছে। এটিকে অদ্ভুত বিষয় হিসেবে অভিহত করেন তিনি। তবে এসব কথা পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের প্রসঙ্গে খাটে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আয়োজনে এবং জাতিসংঘ ডেমোক্রেসি ফান্ড (ইউএনডিইএফ)-এর সার্বিক সহযোগিতায় জাতীয় উন্নয়নে অঙ্গীকার: শিক্ষা, মানসম্মত কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা শীর্ষক দিনব্যাপী সম্মেলন আজ রাজধানীর লেকশোর হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।

তিনি বলেন, আমি একটা প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করছি। প্রতিনিয়ত সেখানকার নিম্ন আয়ের মানুষের সঙ্গে নিবিড়ভাবে মেলামেশা করি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, নির্বাচনী ইশতেহার দেশের বড় বড় শহরের নাগরিক সমাজের কাছে যে অর্থ বহন করে, গ্রামের গরিব মানুষের কাছে বোধ হয় একই অর্থ বহন করে না। এই মানুষেরা সাধারণত সংসদ সদস্যদের কাছে সরকারি সহায়তার কার্ড দাবি করেন। আগে বিদ্যুৎ চাইত, এখন আর তার দরকার হয় না। এ ছাড়া সড়ক, সেতু ও কালভার্ট দাবি করেন তাঁরা।

তিনি আরও বলেন, বলা বাহুল্য, কাজের সুযোগ চান তাঁরা, যাতে সুরক্ষিত জীবন যাপন করা যায়; অর্থাৎ সামাজিকভাবে স্থিতিশীল জীবন চান। এরা নিষ্পেষিত। সে জন্য কাজের সুযোগ তাঁদের জন্য জরুরি। এরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে তাঁর মত, এই শ্রেণির মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি নাগরিক সমাজের কথার সুরের সঙ্গে মেলে না।

সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে থাকে। এই ইশতেহার রাষ্ট্র পরিচালনায় রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, নিজ দলের আদর্শিক ও রাজনৈতিক অবস্থান ঘোষণা ও ভোটারদের তথা জনগণের প্রতি রাজনৈতিক অঙ্গীকারের ধারণা দেয়। গত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ইশতেহারে উল্লিখিত শিক্ষা, মানসম্মত কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা বিষয়ে প্রতিশ্রুতিগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করা এবং এসব বিষয় বাস্তবায়নে সরকার কর্তৃক গৃহীত নীতিমূলক পদক্ষেপগুলো তুলে ধরা এবং নির্বাচনী ইশতেহারের গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, শোভন কাজ এসডিজির একটি অঙ্গীকার। কিন্তু দেশের চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা আর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২৫ টাকা। দেশের সরকারি কর্মচারীদের বেতন এখন শোভনতার সীমার ওপরে। কিন্তু বেসরকারি খাত বা সরকারের মধ্যে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে যে জনবল নিয়োগ করা হয়, তাদের বেতন অনেক কম। সমস্ত নিপীড়ন নিচের দিকে চলে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে মূল উপস্থাপনা দেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারের ওপর আলোকপাত করেন তিনি। এই সম্মেলনের আগে স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সংলাপ আয়োজন করা হয়েছিল বলে তিনি জানান। সেই সব সংলাপের সার সংক্ষেপ তিনি অনুষ্ঠানে পেশ করেন।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের ইচ্ছা থাকলেও স্থানীয় পর্যায়ে সেই সদিচ্ছা কতটুকু আছে, তা নিয়ে জনগণের উদ্বেগ আছে। এ ছাড়া নির্বাচনী ইশতেহার তৈরিতে স্থানীয় মানুষকে কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায়, তার কাঠামো দরকার। তাঁর আশাবাদ, আগামী নির্বাচনের ইশতেহার তৈরির সময় রাজনৈতিক দলগুলো আরও অংশগ্রহণমূলক মনোভঙ্গি গ্রহণ করবে।

অর্থসূচক/এএইচআর/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.