দ্বৈত প্রতিকূলতার কবলে পড়েছে বিশ্বের ২য় শীর্ষ পোষাক রফতানিকারক দেশ বাংলাদেশ। একদিকে পোশাকের বৈশ্বিক চাহিদা কমেছে। অন্যদিকে বিদ্যুৎ সংকট বেগমান হয়েছে। এই অবস্থায় কমেছে রফতানি অর্ডার। এটা দেশের অতিমারি থেকে অর্থনৈতিক উত্তরণের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) এমনি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ব্লুমবার্গ ও ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইকোনোমিকস টাইমস।
প্রতিবেদনে তন্ময় হিলফিগার ও ইন্ডিটেক্স এসএ’স জারা কোম্পানির ব্যবস্থাপনার পরিচালক ফজলুল হক দাবি করছেন, এক বছর ব্যবধানে জুলাইয়ে নতুন অর্ডার বাড়েনি, উল্টো কমেছে ২০ শতাংশ। উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে রফতানি পণ্যে না পৌঁছানের জন্য তিনি দুটো বিষয়কে দায়ী করছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে খুচরা বিক্রেতারা হয় নির্দিষ্ট সময়ে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস স্থগিত করে রেখেছে। আর না-হয় অর্ডার আনতে গড়িমসি করছে। এটা দেশের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।
তিনি আরও জানান, অর্ডার না আসা মানে দেশের অর্থনীতি বিপদে পড়া। এই পোশাক শিল্পের ভূমিকা রয়েছে মোট দেশজ উৎপাদনের ১০ শতাংশের বেশি, যেখানে ৪৪ লাখ লোক এই কর্মে নিয়োজিত রয়েছে। এই দুঃসময়ে এসে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার জ্বালানি সংরক্ষণ করতে গিয়ে দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে না।
এই মুহূর্তে দেশ-বিদেশে পোশাক খাত বহুমুখী প্রতিকূলতার শিকার হচ্ছে উল্লেখ করে ফজলুল হক বলেন, যথাসময়ে পোশাক রফতানি করতে হলে দেশে অবিঘ্নিত বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখা প্রয়োজন।
জ্বালানি সংকটে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। ডায়িং ও ওয়াশিং ইউনিটের জন্য দিনে তিন ঘন্টা জেনারেটরের উপর ভরসা করতে হচ্ছে। এতে জেনারেটরের ব্যয় বিদ্যুতের চেয়ে বেড়ে তিনগুণ হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ সংকটে ডায়িং ও ওয়াশিং ইউনিটের উৎপাদন কার্যক্রম কোনোভাবেই বন্ধ রাখা যায় না। যদি এটা করতে হয়, তাহলে সব ফেব্রিক্স নষ্ট হয়ে যাবে। প্রতিবেদনে এমনটিই জানিয়েছেন স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ লিমিটেডের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান।
উল্লেখ্য, করোনা পরবর্তী সময়ে এসে রফতানি অর্ডার বাতিল দক্ষিণ এশিয়ায় করোনা মহামারি পূর্বকার সময়কেই মনে করিয়ে দেয়। অর্থবছর জুন-২০২০ এ বাংলাদেশের পোশাক রফতানি হয়েছে প্রায় ২৮ বিলিয়ন (২৭.৯৫) মার্কিন ডলার। এটা বিগত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। তবে চলতি বছর (২০২২) জুনে রফতানি বেড়ে ৪২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। এটা দেশের মোট রফতানির ৮২ শতাংশ। আর এটাই এ বছর রফতানি রেকর্ড করেছে।
এদিকে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল অর্থ সহায়তার জন্য আবেদন করেছে। এই মুহূর্তে দেশের রিজার্ভ কমে ৩৯.৭৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে (জুলাই ১৩, ২০২২)। এটা গতবছর একই সময়ে ছিল ৪৫.৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এখন যে পরিমাণ রিজার্ভ সংরক্ষিত আছে তা দিয়ে মাত্র চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। উল্টোদিকে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি ৩৩.৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে (জুন-২০২২)।
অর্থসূচক/এইচডি/এমএস



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.