‘বাংলাদেশ ব্যাংক রেগুলেটরি কাজ করবে, পরিচালনার দায়িত্ব নয়’
ঋণ পুনঃতফসিল এবং পুনর্গঠনে জারি করা নতুন নীতিমালার বিষয়ে ব্যাখ্যা
এখন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক রেগুলেটরি কাজ করবে কিন্তু পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে না। পরিচালনার কাজ করবে ব্যাংকের নিজস্ব পর্ষদ। কেননা বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে সর্বোচ্চ জায়গায় যেতে চায়। সেই আলোকে এবং অর্থনীতির স্বার্থেই ঋণ পুনঃতফসিল এবং পুনর্গঠনের নতুন নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের দায়িত্ব দেয়া হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তা নিয়মিত পরিদর্শনের মাধ্যমে তদারকি করবে।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।
গতকাল সোমবার ঋণ পুনঃতফসিল এবং পুনর্গঠনে জারি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নীতিমালার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী পরিচালক ও সহকারি মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদ এবং পরিচালক সাঈদা খানম।
আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও খেলাপি ঋণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার যুক্তি দেখিয়ে ঋণখেলাপিদের আবারও বড় ছাড় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যেখানে মাত্র আড়াই থেকে পাঁচ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে চারবার ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেওয়া হয়।
গতকাল সোমবার (১৮ জুলাই) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যা নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও খাত-সংশ্লিষ্টদের সমালোচনার মুখে পড়ে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি। এর ব্যাখ্যা দিতেই আজ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠনের ক্ষমতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের হাতে দেয়ার বিষয়ে মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কে ভালো জানে না। ব্যাংকগুলোই তার গ্রাহক সম্পর্কে ভালো জানে। তারা বুঝতে পারবে কোন গ্রাহক ঋণ নিয়মিত পরিশোধ করছে। কাদের আবার ঋণ সুবিধা দেয়া যেতে পারে। সেজন্য ব্যাংকের হাতে সেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এখন থেকে ঋণের ভালো-মন্দের দায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক পলিসি দেবে, তবে ঋণের দায়ভার আর নেবে না। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ যে গ্রাহককে ঋণ দিয়েছে, সেটা ভালো হলে পর্ষদের, খারাপ হলেও দায় পর্ষদের ওপর পড়বে। যেহেতু ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুবিধাও পর্ষদ দেবে। ঋণের ভালো-মন্দের দিকটাও তাদের নিতে হবে।
ঋণ নিয়মিত করার ক্ষমতা এখন থেকে পুরোটাই ব্যাংকগুলোর হাতে দেওয়ায় ব্যাংকগুলোই ঋণ আদায়ের কৌশল বের করবে। ফলে খেলাপি ঋণ কমে আসবে বলে আমরা আশা করছি।
করোনার প্রভাব এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি চলছে, নতুন নীতিমালায় সেই বিষয়টিও প্রাধান্য পেয়েছে বলেও জানান তিনি। ।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, খেলাপি ঋণের কারণে দেশের ব্যাংকিং খাতের অনেক কিছু নির্ভর করে। খেলাপি ঋণ বেশি থাকলে দাতা সংস্থাগুলোও ভালোভাবে নেয় না। তাই এই নীতিমালার মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কমানোর কৌশল নেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিপদে পড়েই গ্রাহক খেলাপি হয়। পুনঃ তফসিলের জন্য ডাউনপেমেন্ট বেশি থাকার কারণে অনেকেই পুনঃতফসিল করতে পারে না। এ কারণে ডাউনপেমেন্টের হার কমানো হয়েছে। এর ফলে খেলাপি ঋণ কমে আসবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কোনো গোষ্ঠীর চাপে ঋণ খেলাপিদের এই সুযোগ দেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন গভর্নর মন্ত্রণালয় থেকে এসেছেন। তিনি অনেক বিচক্ষণ। ব্যাংক খাতের জন্য তিনি ভালো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তাই কোনো চাপ বা অন্য কারো সাথে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। বরং দেশের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থেই এই নীতিমালা জারি করা হয়েছে।
বর্তমানে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে পারছে না। নতুন নীতিমালার আওতায় গ্রাহকদের ঋণ সুবিধা দেয়া হলে ব্যাংকগুলোরও একই অবস্থা হবে কিনা এমন প্রশ্নের উওরে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঋণের বিভিন্ন সুবিধা দেয়ার পরেও ব্যাংকগুলো ভালো মুনাফা করেছে। ফলে এই ধরনের আশঙ্কার কোন কারণ নেই।
নতুন নীতিমালার আওতায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে সহজেই ঋণ নিতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা পরিচালক অন্য ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নিতে হলে ব্যাংক কোম্পানি আইনের আলোকে অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়েই ঋণ নিতে হবে। ফলে পারষ্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে তাদেও ঋণনেয়ারকোন সুযোগ নাই।
অর্থসূচক/এমএস/এমএস
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.