টিকটক করতে গিয়ে চলতি বছর ১০ জনের মৃত্যু

গত কয়েক বছর ধরে চীনা শর্ট ভিডিও মেকিং প্লাটফর্ম টিকটক’র অপব্যবহার এতটা বেড়েছে যে, বর্তমান প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এটি মৃত্যুফাঁদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরে শর্ট ভিডিও মেকিং প্ল্যাটফর্মে টিকটক তৈরি করতে গিয়ে বাংলাদেশের অন্তত ১০ তরুণ-তরুণী প্রাণ হারিয়েছে।

বুধবার (১৩ জুলাই) বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এত তরুণ-তরুণীর মৃত্যুর কারণ টিকটক হলেও এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনও অভিভাবক মামলা করেনি। টিকটক বাংলাদেশের লাইসেন্সধারী কোনও প্রতিষ্ঠান নয়। এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে অথচ সরকার এই প্লাটফর্ম থেকে কোনও প্রকার রাজস্ব পায় না। বরং বিভিন্ন সময় দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর ছবি বা বিভিন্ন শীর্ষ স্থানীয় স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গের ছবি কেউ টিকটক ভিডিও বানাতে ব্যঙ্গাত্মক রূপে প্রকাশ করা হয়। ইতোমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি, ডাক ও টেলিযোগমন্ত্রী টিকটক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু আমাদের দাবি, মন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে বা কমিশনের কোনও সদস্য বা সচিবকে সদস্য করে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে টিকটকের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে করে এই প্লাটফর্ম বন্ধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, গত ৮ জুলাই নোয়াখালীর চাটখিলে টিকটক ভিডিও বানানোর সময় অসাবধানতাবশত পা পিছলে গেলে সানজিদা আক্তার নামে ১১ বছর বয়সী এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। সোমবার কুমিল্লায় চলন্ত ট্রেনের ছাদে টিকটক করতে গিয়ে পা পিছলে মেহেদী হাসান (১৫) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া টিকটক-কে কেন্দ্র করে ২০১৯ সালের মার্চে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আরাফাত খুন হয়।

গত ২ মার্চ ২০২২ রাজবাড়ী জেলার কালোখালি উপজেলায় রেলব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে টিকটক করতে গিয়ে হোসেন (১৬) নামের একজন ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মারা যায়। ৮ মে ২০২২ নড়াইলের কালিয়ায় টিকটক করতে বাধা দেওয়ায় মায়ের সাথে অভিমান করে কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করে সুমি আক্তার (১৯)। ১৬ মে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার শহরের লাল ব্রিজের অদূরে হৃদয় (১৫) নামে এক কিশোর বিকেল পাঁচটার দিকে খুলনাগামী নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস ট্রেনের সামনে টিকটক বানাতে গিয়ে কাটা পড়ে। ২২ মে নীলফামারীর সৈয়দপুরে টিকটক করতে গিয়ে নদীতে ডুবে মৃত্যু হয় মুস্তাকিম ইসলাম (১৬) নামে এক কিশোরের।

গত বছর ২০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জে টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে নির্মাণাধীন তিন তলা ভবনের ৭ থেকে পড়ে অনিল (১৪) বয়সী এক কিশোরের মৃত্যু হয়। তরুণ-তরুণীদের মৃত্যুর দায়ভার কোনওভাবেই টিকটক কর্তৃপক্ষ এড়িয়ে যেতে পারে না। এর দায়ভার তাদের নিতে হবে। এ ছাড়াও আরও অনেক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে টিকটক বানাতে গিয়ে, যার সঠিক কারণ নির্ণয় না হওয়া এবং প্রকাশ না পাওয়ায় নাম পরিচয় তুলে ধরতে পারছি না।

গত বছরের টিকটক বানানোর প্রলোভনে ভারতে তরুণী পাচার হয়েছিল। গত বছরের জুন মাসে টিকটকের ফাঁদে ফেলে এক তরুণীকেও ধর্ষণ করা হয়। তাছাড়া পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং গড়ে উঠেছে তার অন্যতম কারণ টিকটক।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.