সরকারের অব্যবস্থাপনা ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্প এবং ভারতের সঙ্গে নদী নিয়ে যৌথ সমন্বয় করতে না পারার ব্যর্থতার ফল হিসেবে সিলেটে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে বলে দাবি করছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সংগঠন (বাপা)।
মঙ্গলবার (২১ জুন) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)-তে ‘আকস্মিক বন্যায় সিলেটে মানবিক বিপর্যয়ঃ কারণ ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় সংগঠনটি। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাপা’র নির্বাহী সহ-সভাপতি ডা. মো. আব্দুল মতিন, যুগ্ম সম্পাদক শারমীন মুরশিদ, অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জমান মজুমদার, নদীও জলাশয় বিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব ড. হালিম দাদ খান প্রমুখ।
সম্মেলনে বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) এর গ্লোবাল কো-অর্ডিনেটর ড. খালেকুজ্জামান বলেন, নদী দখল, যত্রতত্র বালু উত্তোলন, নদীর অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম, জলবায়ু পরিবর্তনে অতিবৃষ্টি এবং বৃষ্টিপাতের ধরন পাল্টে যাওয়ায় সিলেটে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। ভারত একতরফাভাবে মেঘনা অববাহিকায় আন্তঃদেশীয় ছোটবড় ৪৬টি নদ-নদী-খালের পানি ব্যবহার করছে। এগুলো ব্যবহার করে ভারত পানি-বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সেচ প্রকল্প স্থাপন করেছে যা সিলেটের মানবিক বিপর্যয়ের জন্য দায়ী।
তিনি বলেন, শুকনো মৌসুমে ভারত সেচ ও পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নদীর পানি ধরে রাখে। আর বর্ষাকালে উজানের সমস্ত বাঁধ এবং জলাধারের গেইট খুলে দেয় যা হাওরে বন্যার তীব্রতা বাড়াতে সহায়তা করে।
খালেকুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ সরকার ভুল পানি নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের নদী, জলাশয় এবং হাওরের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। এছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বালু উত্তোলন ও প্লাবনভূমি দখলের ফলে নদ-নদীর প্রবাহ ধারণক্ষমতা কমে গেছে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় বাপা’র সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল সিলেটের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দেখে বলেন, যেভাবে এখানের খাল-বিল, জলাশয় ও নদীগুলো ভরাট করা হচ্ছে না জানি কখন ঢাকার উপর এমন মানবিক বিপর্যয় নেমে আসে। জলবায়ু পরিবর্তন, সরকারের অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্প ও মেঘনা নদীকে ঘিরে ভারতের একতরফা অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে নদীগুলো তার চরিত্র হারাচ্ছে, সেই সঙ্গে হারাছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য।
বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সম্মেলনে বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক শারমীন মুরশিদ জানান, বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বাংলাদেশকে ভারতের সাথে যৌথ নেগোশিয়েশনে যেতে হবে। এ বন্যায় শুধু যে বাংলাদেশের মানুষ মারা গেছে তা নয়, ভারতেরও বেশ কিছু মানুষ মারা গেছে। সিলেটের হাওরে যারা সরকারকে ‘চিন্তাহীনভাবে’ অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নের পরামর্শ দিচ্ছে তারা শত শত মানুষের জীবনকে বিপন্ন করছে। আমরা (বাপা) জানতে চাই কারা সরকারকে এ উপদেশ দিচ্ছে এবং সরকার কেন এ ঘটনাকে তলিয়ে না দেখে আরও রটিয়ে দিচ্ছে। তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানান তিনি।
এ ছাড়া এসব সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে হলে নদী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নদী বক্ষ থেকে বাড়তি পলি সরিয়ে নিতে হবে। প্রবাহ ধারণের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। যৌথ নদী কমিশন গঠন করতে হবে। জাতিসংঘের পানি প্রবাহ আইন (১৯৯৭) এর আওতায় পানি-পলি-নদী-ভূমি ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সঙ্গে হাওরের প্রত্যেকটি নদী, খাল, জলাশয়ের গভীরতায় পরিবর্তনের ধরণ নির্ধারণ করে কয়েক বছর অন্তর অন্তর ভূমিরূপ, ভূমি-ব্যবহার এবং উচ্চতার জরিপ চালানো দরকার বলে জানায় সম্মেলনে উপস্থিত বক্তারা।
অর্থসূচক/এএইচডি/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.