৩ জেলায় আবারও বন্যা

পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ

পাহাড়ি ঢলে আবারও দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্লাবিত হয়েছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার বিভিন্ন উপজেলা পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া নিম্নাঞ্চলে বাড়িঘরের ছাদ ছুঁই ছুঁই পানি। পানির নিচে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর।

এদিকে মাত্র ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে সুনামগঞ্জের সদর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সুরমা নদীর তীর উপচে হু-হু করে পানি ঢুকেছে লোকালয়ে। বানের পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এ ছাড়া সিলেটের গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা তলিয়ে গেছে।

এক দিনের ব্যবধানে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বেড়েছে ৪৩ সেন্টিমিটার। তলিয়ে গেছে ছাতক গৌবিন্দগঞ্জ সড়ক, দোয়ারাবাজার সুনামগঞ্জ সড়ক তাহিরপুর বিশ্বম্ভরপুর সড়ক ও সাচনা সুনামগঞ্জ সড়ক। জেলার চারটি উপজেলার ১৯টি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ছাতকের বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে দুই শতাধিক পরিবার ও দোয়ারাবাজারের আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে ১০টি পরিবার।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৬০ সেন্টিমিটার, চেলা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৭৫ সেন্টিমিটার ও পিয়াইন নদীর পানি ১৮৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ডাইকি, বটেরখাল ও বোকা নদীর পানিও বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমাসহ এসব নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার শতাধিক ছোট-বড় সবজি বাগান। শহরের ট্রাফিক পয়েন্ট ছাড়া গোটা শহরের রাস্তা-ঘাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। শহরের রাস্তায় এখন নৌকা চলাচল করছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহরুল ইসলাম বলেন, গেলো ২৪ ঘণ্ডায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৮১২ মিলিমিটার ও সুনামগঞ্জে ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর প্রভাবে মঙ্গলবার ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত সুনামগঞ্জে উজানের ঢলে পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আবার বুধবার সন্ধ্যা থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। আগামীকালের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে অনেক পানি কমে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে আরও কয়েকদিন সুনামগঞ্জে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।

আবহাওয়া সংস্থাসমূহের গাণিতিক মডেল ভিত্তিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, শুক্রবার (১৭ জুন) নাগাদ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের কতিপয় স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি নামার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার এবং গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগাঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আবার তিস্তা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে এবং সাময়িকভাবে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

হঠাৎ করে আসা বন্যায় আবারও হুমকির মুখে পড়েছেন মাছ চাষীরা। বিভিন্ন মাছের খামারে প্রবেশ করতে শুরু করেছে বন্যার পানি। স্রোতে অনেকের পুকুরের পাড় ভেঙে মাছ ভেসে যাওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। পুকুরের সুরক্ষায় বৃষ্টির মধ্যেই রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন মাছচাষীরা।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.