এবারের বাজেট ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকার প্রবণতা’: আইবিএফবি

বাজেটে একখাতের ব্যয়কে মুখরোচক করার জন্য আরেক খাতে দেখিয়ে ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকার প্রবণতা’ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিবেশ পরিচিতি ও সমন্বয়কারী সংগঠন, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি)।

সোমবার (১৩ জুন) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩: পর্যালোচনা ও সুপারিশ’ শিরোনামে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান, ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, আপনারা দেখবেন যে শিক্ষাখাতকে বড় করে দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মতো অনেক খাত আছে যেগুলোতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। এই যে একখাতকে বাড়িয়ে মুখরোচক করা ও অন্যখাতের বরাদ্দকে কমিয়ে দেওয়ার যে প্রবণতা এটাই হল ‘শাখ দিয়ে মাছ ঢাকার প্রবণতা।’

আবার মেডিটেশনের উপর যে কর আরোপ করা হয়েছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই যে মেডিটেশনের উপর করারোপ সেটার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। এটাও কিন্তু অনেকটা ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকার প্রবণতা’।

অনুষ্ঠানে সংগঠটির প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন রশিদ বলেন, সরকার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ করে দিলেও বাজেট বক্তৃতায় কিন্তু দুর্নীতির প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গেছেন।

তিনি আরও বলেন, সরকার ৭ শতাংশ হারে কর প্রদানের মাধ্যমে পাচার করা কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এটা হলে নিয়মিত করদাতারা কর দিতে নিরুৎসাহিত হবে। কালো টাকা সাদা করার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া উচিত। সেইসঙ্গে কালো টাকা উদ্ধারে কঠোর কর্মসূচিও চালিয়ে যেতে হবে। তা না হলে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সংস্থার বিরুপ প্রতিবাদের সম্মুখীন হতে হবে।

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একাত্মতা করে এনবিআর’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, করের সংখ্যা না বাড়ালে অনেকেই কর ফাঁকি দিবে। এতে যারা কর দিচ্ছে তাদের উপর বাড়তি চাপ পড়বে। আবার জনগণের দেওয়া করের টাকা সরকার যথাযথভাবে ব্যয় করছে নাকি ‘বালিশের গদিতে’ রাখছে সেটাও একটা দেখার বিষয়।

এ সময় বাজেট পর্যালোচনা ও সুপারিশ নিয়ে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির ভাইস প্রেসিডেন্ট লুৎফুন্নিসা সৌদিয়া খান (অর্থবিভাগ), পরিচালক ড. মো. আলি আফজাল। এছাড়া বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কম্পিটিশন কমিশনের লিগ্যাল ইকনোমিস্ট ও কলামিস্ট এম এস সিদ্দিকী।

অনুষ্ঠানে বক্তরা আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরেন। তারা মনে করেন, অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতিকে ৫.৬ শতাংশের মধ্যে রাখা্র ঘোষণা দিয়েছেন এবং এটাকে বাজেটের বড় একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবেও দেখছেন, কিন্তু এ মূল্যস্ফীতি কিভাবে রাখা হবে সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছুই বলেন নি। কৃষিতে সরকারে যে ভর্তুকি দিয়েছে তা প্রধানত সারে কিন্তু জৈব সারের কথা উল্লেখ করেন নি।

তারাও আরও বলেন, বাজেটে আয়-ব্যয় বন্টনে সুষম প্রতিফলন হয়নি। বাজেটের আকার, বাজেটের বরাদ্দ, শুল্ককর আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি বলে বিভিন্ন মহলের পর্যালোচনায়ও তা উঠে এসেছে। এছাড়া গ্রামীণ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল।

বক্তারা সবশেষে বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য করার জন্য ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পরীক্ষা ও পর্যালোচনার নিয়মিত ব্যবস্থা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণসহ সংসদের ভূমিকা অর্থবহ করার পরামর্শ দেন।

অর্থসূচক/এইচডি/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.