বাজেটে পুঁজিবাজারঃ প্রাপ্তি কম, তবে হারায়নি কিছু-ই

আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেট নিয়ে সারাদেশে নানামুখী আলোচনা চলছে। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টরা বাজেট সম্পর্কে তাদের পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও মতামত তুলে ধরছেন।

পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারী এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারও বাজেটে তাদের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে এদের একটি বড় অংশ ঘোষিত বাজেট নিয়ে তাদের হতাশা প্রকাশ করেছেন। প্রায় সবার মুখে প্রায় একই কথা-এবারের বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক কিছু নেই। সবচেয়ে বেশি হতাশা ছড়িয়েছে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার বিদ্যমান সুযোগ আগামী অর্থবছরে বহাল না রাখার প্রস্তাবে।

তবে পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, ঘোষিত  বাজেটকে এতটা নেতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করা ঠিক নয়। আর পুঁজিবাজারের জন্য বাজেটে কিছু-ই নেই, ঢালাওভাবে এটা বলাও অযৌক্তিক। বাজেটের কারণে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে-এমন ভাবনারও কোনো বাস্তবতা নেই।

তাদের মতে, বাজেটে হয়তো প্রত্যাশার বিপরীতে প্রাপ্তি কম। কিন্তু নেতিবাচক কিছু নেই। কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ ছাড়া বিদ্যমান কোনো কিছুরই পরিবর্তন হয়নি।

ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে মূলধনী মুনাফায় কোনো কর আরোপ করা হয়নি, বাড়ানো হয়নি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মূলধনী মুনাফর উপর প্রযোজ্য করের হার। তালিকা করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সীমা কমানো হয়নি। লভ্যাংশ বিতরণ পর্যায়ে কেটে রাখা উৎসে আয়করের হারও রাখা হয়েছে অপরিবর্তিত।

অন্যদিকে অল্প হলেও বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য কিছু প্রাপ্তি আছে। বাজেটে পাঁচটি খাত ছাড়া বাকী সব খাতের কোম্পানির আয়করের (Corporate Tax) হার ২ দশমিক ৫০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। করপোরেট ট্যাক্স কমানোর ফলে কোম্পানিগুলোর নীট মুনাফা বাড়বে। তাতে বাড়বে কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ বিতরণের সক্ষমতা। এতে কোম্পানিগুলো চাইলে আগের চেয়ে বেশি হারে লভ্যাংশ দিতে পারবে। অন্যদিকে বাড়তি মুনাফার একটি অংশ কোম্পানিগুলোর ব্যবসার সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের কাজে লাগানো যাবে। তাতে উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগকারীরাও লাভবান হবেন।

এছাড়া ঘোষিত বাজেটে করপোরেট কর, উৎসে আয় কর, সম্পূরক শুল্ক, আমদানি শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) সংক্রান্ত এমন কিছু প্রস্তাব রয়েছে, যেগুলো জাতীয় সংসদে অনুমোদন পেলে বিভিন্ন শিল্পখাতের কোম্পানিগুলো লাভবান হবে। বাড়বে তাদের ব্যবসা ও মুনাফা।

আগামী অর্থবছরে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ না থাকলেও পুঁজিবাজারে এর তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। কারণ গত দুই বছরে এই সুযোগ খুব বেশি মানুষ নেয়নি। এই সুযোগের আওতায় বাজারে ২ হাজার কোটি টাকাও বিনিয়োগে আসেনি। যে পরিমাণ অর্থ এসেছে, সেটি বাজারমূলধন ও দৈনন্দিন গড় লেনদেনের বিপরীতে একেবারে সামান্য। অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালও তার বাজেট বক্তৃতায় বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। বিদ্যমান সুযোগে আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ার কারণেই এর মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি। তাই কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ না থাকার প্রস্তাবে বাজারে প্রকৃত কোনো প্রভাব পড়বে না। যদিও কিছুটা পড়েও, তবে তা হবে সম্পূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক কারণে।তাই প্রভাব পড়লেও সেটি দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে বলে বিশ্লেষকদের আশা।

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.