২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও শর্তসাপেক্ষে লিস্টেড এবং নন লিস্টেড কোম্পানির করপোরেট করহার ২.৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে সব ধরনের প্রাপ্তি ও আয় অবশ্যই ব্যাংক স্থানান্তরের মাধ্যমে গৃহীত হতে হবে এবং ১২ লাখ টাকার অতিরিক্ত ব্যয় ও বিনিয়োগ অবশ্যই ব্যাংক স্থানান্তরের মাধ্যমে সম্পাদন করতে হবে। গত বাজেটেও করপোরেট করহার আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন শুরু করেন। এই প্রস্তাবিত বাজেটের নাম দেওয়া হয়েছে ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় পরিবর্তন’।
বাজেট প্রস্তাবনায় অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে বেসরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপি অনুপাত হল ২৩ শতাংশ। উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছানোর লক্ষ্যে সরকার এ অনুপাত বৃদ্ধির নিমিত্ত বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। করপোরেট করহার হ্রাসের মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপি অনুপাতের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব। বর্তমানে অনুসৃত ব্যবসাবান্ধব সরকারি বিভিন্ন নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি করহার দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ও কর সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, অর্থনীতিতে নগদ লেনদেনের প্রাধান্য রাজস্ব আহরণের অন্যতম অন্তরায়। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে নগদ লেনদেন হ্রাস করা গেলে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক ন্যায় বিচার নিশ্চিতকরণসহ সমতাভিত্তিক এবং কল্যাণমুখী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসারের লক্ষ্যে বিগত ২০২১ সালের অর্থ আইনে করপোরেট করহার ৩২.৫০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ করা হয়েছিল।
মোস্তফা কামাল বলেন, অর্থনীতির অধিকতর আনুষ্ঠানিকীকরণ এবং এক ব্যক্তি কোম্পানির প্রতিষ্ঠা উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এক ব্যক্তি কোম্পানির করহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২.৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের অধিক শেয়ারের মাধ্যমে হস্তান্তর হলে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করহার ২২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। তবে এক্ষেত্রে ১০ শতাংশ বা তার কম শেয়ার আইপিও এর মাধ্যমে হস্তান্তরকারী লিস্টেড কোম্পানির কর হার ২২.৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। এছাড়া পূর্বোক্ত শর্ত পরিপালনে ব্যর্থতায় তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ২২.৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।
এ শর্তে নন-লিস্টেড কোম্পানির করহার ৩০ শতাংশ থেকে ২৭.৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল।
প্রস্তাব অনুসারে, তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানি তার পরিশোধিত মূলধনের কমপক্ষে ১০ শতাংশ পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করেছে সেসব কোম্পানিকে ২০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। বর্তমানে এই করের হার ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ। কোনো কোম্পানি ন্যুনতম ১০ শতাংশ শেয়ার ইস্যুর শর্ত পরিপালনে ব্যর্থ হলে ওই কোম্পানিকে বর্তমান হারেই অর্থাৎ ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।
অন্যদিকে তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানি তাদের মোট ইস্যুকৃত শেয়ারের ১০ শতাংশের কম প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে বাজারে ছেড়েছে সেসব কোম্পানিকে আগামী অর্থবছরেও ২২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। আর শর্ত পরিপালনে ব্যর্থ হলে কর দিতে হবে ২৫ শতাংশ হারে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার হ্রাস পেলে কোম্পানিগুলোর নীট মুনাফা বাড়বে। তাতে ভাল কোম্পানিগুলো বাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে। অন্যদিকে কর কমার কারণে নিট মুনাফা বাড়বে বলে কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণার সক্ষমতাও বাড়বে। তাতে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরাও লাভবান হবেন।
ব্যক্তি-শ্রেণির করদাতা ব্যতীত অন্যান্য করদাতাদের জন্য ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে নিম্নরূপ কর্পোরেট করহার প্রস্তাব করা হয়েছে:
অর্থসূচক/এমএস/এমএস