‘যাদের পরিবার বিদেশে থাকে, তাদেরকে লাল তালিকায় রাখা প্রয়োজন’

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, দেশের অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও সন্তুষজনক। ওভার ইনভয়েসিং, আন্ডার ইনভয়েসিং ও হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার কমাতে পারলে রিজার্ভ আরও অনেক বেড়ে যাবে।

আজ রোববার (২৯ মে) বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট (বিএএসএম) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, দেশের ব্যবসায়ীদের একটি অংশ মুদ্রা পাচারের সাথে জড়িত। এদের অনেকের পরিবার বিদেশে থাকে। অনেক শিল্প গ্রুপের নিউইয়র্ক, টরেন্টো, লন্ডন, দুবাই, সিঙ্গাপুর, হংকং, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অফিস আছে। এদের মধ্যে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের প্রবণতা বেশি। এই ধরনের ব্যবসায়ীরা পণ্য মূল্য কম দেখিয়ে (Under Invoicing) বিদেশে তাদের নিজস্ব অফিসকে ক্রেতা সাজিয়ে সেখানে পণ্য রপ্তানি করেন। পরে ওই অফিস থেকে প্রকৃত ক্রেতাদের কাছে একই পণ্য বেশি দামে বিক্রি করা হয়। বাড়তি মূল্য আর দেশে ফিরিয়ে আনা হয় না। সেগুলো বিদেশেই থেকে যায়। আবার কেউ কেউ সরকারের দেওয়া নগদ প্রণোদনার বাড়তি অর্থ হাতিয়ে নিতে প্রকৃত রপ্তানি মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য দেখিয়ে থাকেন।

আমদানির ক্ষেত্রেও একই কৌশল অবলম্বন করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালের প্রকৃত দামের চেয়ে বেশি দাম দেখিয়ে (Over Invoicing) ওই বাড়তি দামে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা হয়। কম দামে পণ্য এনে বাড়তি অর্থ (ডলার) দেশের সরিয়ে নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, যেসব মানুষের পরিবার বিদেশে থাকে, যে সব ব্যবসায়ী গ্রুপের বিদেশে অফিস আছে, তাদেরকে লাল তালিকায় রাখা প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত এমন একটি তালিকা বানিয়ে তাদেরকে বিশেষ মনিটরিংয়ে রাখা।

যেসব পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানির সুযোগ রয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে আমদানি-মূল্য বাড়িয়ে দেখানোর প্রবণতা বেশি থাকতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এসব পণ্য আমদানিতে যেহেতু শুল্ক দিতে হয় না, তাই বাড়তি মূল্য দেখালেও কোনো বাড়তি ব্যয় নেই।এভাবে ওই বাড়তি মূল্যের টাকা বিদেশে রেখে দেওয়া হয়। তাই শুল্কমুক্ত পণ্যের আমদানি বিশেষভাবে মনিটর করা জরুরি।

প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআর চাইলে অর্থ পাচার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। বিশেষ করে আমদানির ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে যে পাচার হয়ে থাকে সেটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কারণ বিশ্ববাজারে কখন কোন পণ্যের কী দাম তা যাচাই করে দেখা বর্তমানে মোটেও কোনো কঠিন কাজ নয়।

তিনি বলেন, হুন্ডি বন্ধ করা গেলেও অর্থ পাচারের পরিমাণ অনেক কমিয়ে আনা যাবে।

তিনি বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রক্ষাপটে বাংলাদেশ শীর্ষক একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে আলোচিত বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জামান। রাজধানীর আগারগাঁয়ে বিএসইসি বিএসইসি ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ এবং আয়োজন বিএএসএম এর মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম আরও বলেন, দেশের অর্থনীতি অনেক ভাল পারফর্ম করছে। আমদানি অনেক বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সাময়িকভাবে কিছুটা চাপ পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানি আয়ে যে হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, আমদানি ব্যয় বেড়েছে তারচেয়ে অনেক বেশি হারে। এটিকে অনেকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছেন, নেতিবাচকভাবে দেখছেন। বাস্তবে এটি নিয়ে মোটেও উদ্বেগের কিছু নেই। বরং বিষয়টি ইতিবাচক।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস অতিমারির কারণে আমাদের সামনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। চীনের রাজধানী বেইজিং ও সবচেয়ে বড় বাণিজ্য শহর সাংহাই কোভিডের কারণে এখনো লকডাউনে। কোভিডের ভয়ে ভিয়েতনামসহ অনেক দেশ সহজে ভিসা দিচ্ছে না। একই কারণে বিশ্বের আরও অনেক দেশ যথেষ্ট রক্ষণশীল অবস্থানে আছে। এসব কারণে বিপুল সংখ্যক বিদেশী ক্রেতা পণ্যের নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছে। বিপুল পরিমাণ ক্রয়-আদেশ আসছে। পণ্য রপ্তানি করতে হলে বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। তাই এখন আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু রপ্তানি আয় যেটি আসছে, সেটি আগের অর্ডারের। তাই আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয়ের মধ্যে এত বেশী ব্যবধান। বর্তমানে আমদানি করা কাঁচামাল দিয়ে তৈরি পণ্য রপ্তানির আয় যখন দেশে আসতে শুরু করবে, তখন রপ্তানি আয়েও বড় উল্লম্ফন হবে। তাতে আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয়ের মধ্যে ব্যবধান আর এত বেশী থাকবে না।

তবে এই সম্ভাবনা সত্ত্বেও তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, আমদানির নামে অর্থ পাচার হচ্ছে কি-না সেদিকে বিশেষভাবে নজর রাখতে।

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.