জ্বালানি তেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় সৌদি আরামকো

ক্রমাগত পরিবেশবান্ধব ‘গ্রিন এনার্জি’র দিকে ঝুঁকছে বিশ্ব। অন্যদিকে চলছে তেলের সরবরাহ সংকট। এমন অবস্থায় তেল বাণিজ্যে বিনিয়োগ করতে ভরসা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা । এতে করে জ্বালানি তেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সৌদি আরামকোর প্রধান নির্বাহী আমিন নাসের।

আমিন নাসের বলেন, ‘আমরা উত্তোলন বাড়াতে পারছি না, কারণ জ্বালানি তেলে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কম। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল ২০২৭ সালের মধ্যে প্রতিদিনকার তেল উত্তোলন বৃদ্ধি করে ১৩ মিলিয়ন ব্যারেলে নিয়ে যাব, যেটি বর্তমানে ১২ মিলিয়ন ব্যারেলে রয়েছে।’

সোমবার (২৩ মে) সুইজারল্যান্ডের ডাভোসের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে নাসের বলেন, ‘বিশ্ব মাত্র ২ শতাংশ অতিরিক্ত তেলের মজুত নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। কোভিডের আগে বিমান সংস্থাগুলোর প্রতিদিন আড়াই মিলিয়ন ব্যারেল তেলের দরকার হতো। বিমান সংস্থা তাদের চাহিদা বাড়ালে বিপদে পড়তে হবে।’

চীনের লকডাউন নিয়ে নাসের বলেন, ‘এটি খুব তাড়াতাড়ি সমাধান হবে ও আগের মতোই উৎপাদন শুরু হবে।’ তবে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন নাসের।

বর্তমানে সৌদি আরামকো প্রতিদিন সাড়ে ১০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উত্তোলন করে। চলতি বছরের শেষে প্রতিষ্ঠানটি উত্তোলন বাড়িয়ে ১১ বিলিয়ন ব্যারলে উন্নীত করার কথা জানিয়েছে। মূলত উত্তোলন বৃদ্ধি এখন অনেকটাই ওপেক ও রাশিয়ার মধ্যকার সম্ভাব্য চুক্তির ওপরে নির্ভর করছে।

এদিকে জ্বালানি সংকট মেটাতে পশ্চিমারা বহুদিন ধরেই রিয়াদের ওপরে চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। তেল উত্তোলন বৃদ্ধি প্রসঙ্গে এবার আরামকো সাফ জানিয়ে দিল, বিনিয়োগ না বাড়লে, বাড়বে না উত্তোলন।

বিনিয়োগ সংকটের কথা উল্লেখ করে নাসের বলেন, ‘এই খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হতে হবে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী তেল উত্তোলন করতে পারলে ২০২৭ সালের মধ্যে সংকট থেকে বেড় হয়ে আসা সম্ভব। তবে এখনই উত্তোলন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। আমরা কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করছি।’

জলবায়ু সংকটে জীবাশ্ম জ্বালানির প্রভাব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নাসের জানান, ব্যবসায়ীদের রেখে জলবায়ু নিয়ে আলোচনা কখনোই ফলপ্রসূ হবে না। মূলত গত বছরে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে কোপ সম্মেলনকে মাথায় রেখে এ মন্তব্য করেন নাসের।

তিনি বলেন, ‘নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যকার আলোচনায় আমি সমাধানের কোনো রাস্তা দেখতে পাচ্ছি না। আমাদের আরও গঠনমূলক আলোচনা করতে হবে। নীতিনির্ধারকরা বলছেন ২০৩০ সাল পরে জীবাশ্ম জ্বালানির প্রয়োজন হবে না। তাহলে ৬-৭ বছরের জন্য পরিকল্পনা করার তো কোনো মানে হয় না। এসব কথায় বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারাচ্ছে। দেখা দিচ্ছে জ্বালানি সংকট।’

বিশ্ব আদৌ গ্রিন এনার্জির দিকে যাবে কিনা এ প্রসঙ্গে নাসের বলেন, ‘সত্যি বলতে তাদের হাতে ‘প্যান-বি’ বলে কিছু নেই। আপনার হাতে যখন বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই, তখন ‘প্ল্যান-এ’ কে নষ্ট করা বোকামি।’

এশিয়ার দেশ নিয়ে নাসের বলেন, ‘এশিয়ার দেশগুলোর মূল উদ্দেশ্য জনসাধারণকে পর্যাপ্ত খাবার দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা। তারা সস্তায় যেটি পাবে, সেটিই ব্যবহার করবে। সস্তায় কয়লা পাওয়া গেলে, কয়লা দিয়েই কাজ চালাবে তারা।’

উন্নত দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে এমন না বিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে। তখন এশিয়ায়র দেশগুলো কম দামে জ্বালানি কিনে তাদের চাহিদা মেটাবে বলে মন্তব্য করেন আমিন নাসের।

অর্থসূচক/এমআর/এমএস

সূত্র: রয়টার্স

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.